বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ চত্বর এখন অরক্ষিত। পরিণত হয়েছে মাদকসেবী ও সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে। ফলে ওই এলাকায় দিন দিন বাড়ছে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি হামলার ঘটনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সীমানা প্রাচীর দেয়া ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থার জন্য বার বার দাবি জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
'ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে মা আর দু’বোনকে নিয়ে অভাবের সংসার । চালের ফুটো টিন আর তচ্ছিন্ন বেড়ার বাড়িতে বিশুর পরিবারকে সংগ্রাম করে বাঁচতে হতো । মানুষের নুন আনতে পানতা ফুরায় আর বিশুর নুন-পান্তা দুটোরই খোঁজ করতে হতো।'
সম্প্রতি ছুরিকাঘাতে নিহত বিশু মিয়ার সাবেক সহকর্মীর লেখা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট এটি। অভাবের সঙ্গে লড়াই করা মেধাবী তরুণ বিশু বাড়ি ফেরার পথে আযিযুল হক কলেজ সীমানার ভেতরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন।
শুধু বিশু নয়, এর আগেও একই জায়গায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশসহ অনেক মানুষ। কিন্তু টনক নড়েনি কলেজ কর্তৃপক্ষের। ফলে কলেজের অব্যবহৃত ভবনগুলো হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের আড্ডাস্থল।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার সাহা বলেন,'অপরাধীরা খুব স্বাভাবিকভাবে অপরাধ করে সেখান থেকে পার পেয়ে যায়, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পাবার পেতে কলেজ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়া আরও আগেই উচিত ছিলো।'
দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও সীমানা প্রাচীর ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়নি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান,'জেলা প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যদি এ বিষয়ে আলোচনা করা হতো, তবে এই অপরাধগুলো জিরো টলারেন্সে আসতো। কলেজ কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই যদি ব্যবস্থা নিতো তাহলে এমনটা ঘটতো না।'
কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ মনে করে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। উল্টো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর দায় চাপালো তারা। বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহজাহান আলী বলেন,' ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি হলে সুবিধা। কারণ, অন্যান্য পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্পাস থেকে একটু দূরে।'
তবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। বগুড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ জানান,'কলেজ কর্তৃপক্ষকে আরও কিছু বিষয়ে একটু সচেতন হতে হবে। সেখানে যে সমস্যাগুলো আছে, তা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করে আমরা সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি।'
২০০৯ সালে শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষের পর শেরে বাংলা, শহীদ আকতার আলী মুন ও তিতুমীর হল ছাড়ে ছাত্ররা। প্রায় ১২ বছর পর মুন ছাত্রাবাসটি পরিত্যক্ত ঘোষণা ও বাকি দুটি হলের সংস্কারকাজ শুরু করে কলেজ প্রশাসন।