বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল (২৮শে এপ্রিল) কুমিল্লার দুই উপজেলায় পাঁচজন, কিশোরগঞ্জের দুই উপজেলায় তিনজন, যশোর, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গিয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বজ্রপাত কেন হয় এবং এর থেকে বাঁচার উপায়।
বাংলােদশে বজ্রপাত হয় কেন
বাংলাদেশের দক্ষিণ থেকে আসা গরম আর উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে সৃষ্ট অস্থিতিশীল আবহাওয়ায় তৈরি হয় বজ্র মেঘের। এ রকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে হয় বজ্রপাত। এ সময় উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায় তাতেই আঘাত করে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ ভৌগলিক অবস্থান। একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে আসছে গরম আর আর্দ্র বাতাস। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। কিছু দূরেই হিমালয় পর্বত। যেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসে। এই দুই জায়গা থেকে আসা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। গবেষকরা বলছেন, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ৫০ ভাগ বেড়ে যায়। গত কয়েক দশকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলাও তার একটি কারণ। উঁচু গাছপালা বজ্রনিরোধক হিসেবেও কাজ করে। খোলা স্থানে মানুষের কাজ করা এবং বজ্রপাতের বিষয়ে অসচেতনতাও বজ্রপাতে প্রাণহানি বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
বজ্রপাতের সময় করণীয়
* বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাবেন, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।
* বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।
* বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।
* বজ্রপাতের সময় যে কোন ধরণের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।
* খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক ।
* বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিৎ হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
* যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ রাখা যাবে না।
বজ্রপাতে আক্রান্ত হলে করণীয়
বজ্রপাত একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বজ্রপাতে শরীরে বৈদ্যুতিক শক হয়। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় হার্ট এবং ব্রেইন। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং অনেকেই অবশ হয়ে যেতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হয়ে যেতে পারে প্যারালাইজড। যারা মারা যান, তার চেয়ে কয়েকগুণ জটিলতায় ভোগেনে বেঁচে যাওয়ারা।
কেউ যখন বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তাকে বাঁচানোর জন্য প্রাথমিক কিছু বিষয় করা যেতে পারে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দন দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারলে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। বেশি দেরি হলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাকে সিপিআর চালিয়ে রাখতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
বজ্রপাত এমন একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ যা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই জানতে হবে বজ্রপাতের সময় কী করণীয় এবং কী বর্জনীয়। বজ্রপাতের সময় আপনার সচেতনতা হতে পারে আপনার জীবন রক্ষার একমাত্র হাতিয়ার।