আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় মার্চ থেকে জুন মাসে। তবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত।
কয়েক বছর যাবৎ বজ্রপাতের কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মৃত্যু বরণ করেছেন ২ হাজার ১৬৪ জন মানুষ।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল এ অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই বেশি বজ্রপাত হয়। কেন না, এই অঞ্চলে বজ্র মেঘের সৃষ্টিই হয় বেশি। বজ্রমেঘ বেশি তৈরি হওয়ার কারণও প্রাকৃতিক। পৃথিবীর আদিকাল থেকেই বজ্রপাত ছিল। তবে মৃত্যুর হার ইদানিং বেশি বলে নজরে আসছে। কেন এমন ঘটছে তা উদ্ঘাটন জরুরি। এতে সারা বিশ্বে বছরে ২৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সূত্রমতে, বজ্রপাতে বার্ষিক প্রাণহানির সংখ্যার বিচারে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।
অনেকেই মনে করেন, বজ্রপাতে নিহত মানুষের শরীরে মূল্যবান জিনিস তৈরি হয়। তারা হয়তো ধারণা করে লোহার ভেতর দিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি পাস হলে (প্রবাহিত হলে) যেভাবে লোহা চুম্বক হয়ে যায়, এক্ষেত্রেও সেরকম কোনো কিছু হয়। কিন্তু এটা পুরোটাই ভুল।
বজ্রপাতের ফলে মানুষের শরীরে অতিমাত্রায় তড়িৎ প্রবাহ হয় বলেই মানুষ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। বজ্রপাতে মৃতদের দেহ চুম্বকত্বে আবিষ্ট (মূল্যবান ম্যাগনেটে রুপান্তরিত) হয় এটা আমাদের সমাজের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ তড়িৎ প্রবাহের ফলে চৌম্বকে পরিণত হয় এমন কোন পদার্থ বা পদার্থের উচ্চ ঘনত্ব বিশিষ্ট কোন অঙ্গ মানুষের শরীরে নেই যার কারণে বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট তড়িৎ প্রবাহের কারণে মানুষের মৃত্যু হলেও মানবদেহ চুম্বকত্বে আবিষ্ট হবে বা মূল্যবান ম্যাগনেটে রুপান্তরিত হবে।
বজ্রপাত থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় সেটি আল্ট্রা হাই-ভোল্টেজ। বজ্রপাত দুই ধরণের হয়। কোন ব্যক্তির উপর সরাসরি পড়তে পারে অথবা একটি বড় এলাকা জুড়ে বজ্রপাত হতে পারে। কোন ব্যক্তির উপর সরাসরি বজ্রপাত হলে সে সাথে সাথে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। বজ্রপাতে ভোল্টেজ এতো বেশি যে সেটা ১০ হাজার থেকে মিলিয়ন পর্যন্ত চলে যায়। যদি আশপাশের কোন গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, টাওয়ার কিংবা উঁচু ভবনের উপর বজ্রপাত হয় তখন সেখান থেকে আল্ট্রা লো-ডিউরেশন বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়। আশপাশে যদি কেউ থাকে তখন তার শরীরে অতি দ্রুত বিদ্যুৎ প্রবেশ করে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়। বজ্রপাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই তৎক্ষণাৎ মারা যায়। আহত হয়ে অল্প কিছু মানুষ বেঁচে যায়।
এছাড়া গ্রাম্য কবিরাজ বা ওঝারা তাদের ঝাড়ফুঁকের কাজের জন্য এই ধরণের মৃতদেহের হাড় বা শরীরের অন্যান্য অংশ ব্যবহার করেন বলে অনেকে মনে করেন।
এই ধরণের কুসংস্কার থেকেই মৃতদেহ চুরির ধারণাটি চলে আসছে। তবে ইলেকট্রিক শক খেয়ে মানুষের মৃত্যু হলে মৃতদেহ যেমন হয় বজ্রপাতে মৃত মানুষের মৃতদেহ ঠিক একইরকম হয়। কোনো পার্থক্য থাকে না।