বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের লাথারকান্দি গ্রামে বড় মেয়ে স্বামীর বাড়িতে যেতে রাজি না হওয়ায় সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছোট মেয়েকে জামাইর সাথে বিয়ে দেওয়া হয়।
বড় মেয়ের জামাইর পরিবার থেকে বিয়ের খরচের টাকা দাবি করায় টাকা ফেরত দেয়ার সামর্থ না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিতে মেয়ের অভিভাবক বাধ্য হন বলে জানা
গেছে। এ নিয়ে শালিসী বৈঠক হলেও ছোট মেয়েকে বিয়ে দেয়ার বিষয়ে কেউ রাজি না হওয়ায় সালিশীদাররা ওই স্থান ত্যাগ করেন।
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার শাহাদত হোসেনের ছেলে সৈকতের (১৯) সাথে চার মাস পূর্বে বড় বোন লাথারকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া আখির বিয়ে হয়। এরপর ২৩শে মে ছোট বোনের সাথে বিয়ে হয় সৈকতের। তবে ছোট বোনের নাম জানা যায়নি।
জানা গেছে, বিয়ের পর আখি শ্বশুড় বাড়িতে যাওয়ার কিছুদিন পর বাবার বাড়িতে চলে আসে। ২২মে সৈকতের বাবা ও সৈকতের ভগ্নিপতি মো. হাচান আখিকে আনতে যান। আঁখি তাদের সঙ্গে স্বামীর বাড়িতে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি আর কোনো দিন যাবে না বলে জানিয়ে দেন। তখন সৈকতের বাবা ছেলের বিয়েতে যে টাকা খরচ হয়েছে তা দাবি করেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আঁখিদের বাড়িতে ওই রাতেই সালিসী বসে। মেয়ের বাবা টাকা দেয়ার সামর্থ না থাকার বিষয়টি জানালে সৈকতের বাবা তার ছোট মেয়েকে সৈকতের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে সালিশীদারা রাজি না হলে তারা ওই স্থান ত্যাগ করেন।
পরবর্তীতে আখির বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তে ২৩শে মে ছোট মেয়েকে স্বরূপকাঠিতে সৈকতের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখেন অভিভাবকরা।
সালিশীতে উপস্থিত থাকা লাথারকান্দি গ্রামের রুহুল আমিন বলেন, ছেলের বাবার সাফ কথা বিয়ের খরচের টাকা দাও, না হয় ছোট মেয়েকে তার ছেলের সাথে বিয়ে দাও। আর যদি সেটাও না হয় বড় মেয়েকে তাদের সাথে যেতে বলেন। তাদের বৌকে তারা নিতে এখনো রাজী আছে। কিন্তু বড় মেয়ে কোনভাবেই ওই বাড়িতে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তাকে জোর করে পাঠানো হলে দুর্ঘটনা ঘটাবে বলে হুমকি দেয়ায় অভিভাবকরা এ বিষয়ে আর এগোয়নি।
এ ব্যাপারে সৈকতের বাবা শাহাদত হোসেন বলেন, চার মাস আগে ছেলের বিয়ে বাবদ খরচ হওয়া টাকা চাই। অথবা ছেলেকে পুনরায় বিয়ে দেওয়ার দাবি করি মেয়ের পরিবারের
কাছে। এ সময় মেয়ের বাবা টাকা দিতে অপারগতা জানালে আমরা ছোট মেয়েকে সৈকতের সঙ্গে বিয়ে দিতে বলি। এতে মেয়ের অভিভাবক এবং গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা রাজি হলে ছোট মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিয়ে স্বরূপকাঠি চলে আসি।
তিনি আরো বলেন, আমি বারবার মেয়ের বাবাকে বলেছি আমাদের বৌকে আমরা ঘরে নিতে চাই। কিন্তু তারা সে বিষয়ে কোন গুরুত্ব না দিয়ে ছোট মেয়েকে আমার ছেলের সাথে
বিয়ে দিতে রাজি হয়। আমরা জানতেও পারি না কি কারনে আখি আমাদের বাড়িতে আসতে চাইছে না।
আখির বাবা বলেন, ছেলের বাবার দাবি অনুসারে টাকা দিতে পারলে ছোট মেয়েকে ওখানে পাঠিয়ে দেওয়ার দরকার হতো না। আমরা গরিব মানুষ, টাকা দিতে হলে আমার ঘর বিক্রি করতে হবে। তাই বসতঘর হারানোর ভয়ে টাকার পরিবর্তে ছোট মেয়েকে বড় মেয়ের জামাইর সাথে বিয়ে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে বিয়ের কাজী সত্তার মিয়া বলেন, ২৫শে মে বড় মেয়ে তালাক দেন তার স্বামীকে। এরপর ছোট মেয়েকে জামাইর সাথে বিয়ে দিতে আমাকে অনুরোধ জানান মেয়ের বাবা। কিন্তু কনের বয়স না হওয়ায় আমি বিয়ে পড়াতে রাজি হইনি।