স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই ছাত্র আন্দোলনে নাম লিখিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।
ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। একইসঙ্গে পালন করছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্বও। ওবায়দুল কাদের টানা দ্বিতীয়বারের মতো এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ছাত্র আন্দোলনে নাম লিখিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। ছয়দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার ধারাবাহিকতায় অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে শুরু করে সামলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, পালন করছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতি। কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার কল্যাণে ধাপে ধাপে উঠে আসেন জাতীয় রাজনীতির সম্মানজনক স্থানে। পর্যায়ক্রমে দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের উত্তরসূরী নির্বাচতি হন ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদেরের জন্ম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বড় রাজাপুর গ্রামে ১৯৫২ সালের ১লা জানুয়ারি। বসুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাস করেন ওবায়দুল কাদের। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
স্কুল থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ও ছাত্রদের ১১ দফার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) কমান্ডার হিসেবে কম্পানীগঞ্জ থানার দায়িত্বে ছিলেন।
আওয়ামী লীগের দুর্দিনে, দুঃসময়ে রাজপথ কাঁপানো নেতা ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কারানির্যাতিত হয়েছেন বার বার। ১৯৭৫-এর পর কারাগারে থেকেই ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরপর দু'বার এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। দায়িত্ব পান যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
এক এগার পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাগারে ছিলেন। ২০০৮ সালে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে, রেলপথ বিভাগ আলাদা করে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় গঠন করার পর থেকে এর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
রাজনীতির পাশাপাশি বিলুপ্ত দৈনিক বাংলার বাণীর সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন ওবায়দুল কাদের। উপন্যাস ও রাজনৈতিক লেখালেখি মিলিয়ে তার ১০টি বই রয়েছে। তার উপন্যাস নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণাধীন রয়েছে।
৭৫ পরবর্তী প্রত্যেক অবস্থায় দলের যে কোনো দুর্যোগ আর সংকটে ওবায়দুল কাদের নিজেকে প্রকাশ করেছেন আপসহীন চেতনায়। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা আর দুঃসময়ে দলের নির্ভরযোগ্য নেতৃত্বের কারণে চিরদিন নেতাকর্মীদের হৃদয়ে আদর্শ হয়ে বেঁচে থাকবেন ওবায়দুল কাদের।