রাজনীতি, জেলার সংবাদ

বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ জাহাঙ্গীর কবির নানক

হ্যাপী মাহমুদ

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ২৪শে ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:০১:১৩ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ বলতে যা বুঝায় সেটির একটি উদাহরণ হলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের অন্যতম আলোচিত নেতা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম আলোচনা আসছে সেই নাম গুলোর মধ্যে সবার আগে আছে জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম।

একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভজন ব্যক্তি হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। নানক এক সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার পরও প্রশ্ন থেকে যায়, শেষ পর্যন্ত তিনি কি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন?

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করে যে, জাহাঙ্গীর কবির নানক তৃণমূল থেকে উঠে আসা সত্যিকারের একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। কাজেই তারই সাধারণ সম্পাদক হওয়া উচিত। জাহাঙ্গীর কবির নানক একজন কর্মীবান্ধব। তিনি সারাক্ষণ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। কর্মীরা তার কাছে বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে পারে। কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে যে ক'জন নেতা তার মধ্যে অন্যতম হলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

জাহাঙ্গীর কবির নানক শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন এবং অনুগত নেতা হিসেবে পরিচিত। এটি দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য একটি বড় যোগ্যতা। কারণ, সাধারণ সম্পাদককে সার্বক্ষণিক দলের সভাপতির সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করতে হয়। নানক রাজনীতিতে দীর্ঘ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জেল খেটেছেন, নির্যাতন ভোগ করেছেন। পঁচাত্তর পরবর্তীতে যারা ত্যাগী রাজনীতিবিদ তার মধ্যে নানক অন্যতম।

জাহাঙ্গীর কবির নানকের জন্ম ১৪ই জানুয়ারি ১৯৫৪ সালে। তার পৈতৃক বাড়ি বরিশাল জেলার সদর উপজেলার খিরদ মুখার্জী লেন এলাকায়। তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

পঁচাত্তরের পর যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি আওয়ামী লীগের হাল ধরতে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন তখন জাহাঙ্গীর কবির নানককে তিনি আস্থায় নেন। বরিশাল থেকে নিয়ে এসে তার উপর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পরও জাহাঙ্গীর কবির নানক পরবর্তীতে যুবলীগের নেতৃত্বও গ্রহণ করেন। আর এই নেতৃত্বের ধারায় তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছিলেন।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংকটে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০০১ সালের আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের পর যেভাবে আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে যুবলীগ সাহায্য করেছিল সেটি অসাধারণ এবং অনন্য। কিন্তু ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন আসার পর তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং এটিই তার রাজনৈতিক জীবনের একটি নেতিবাচক দিক বলে অনেকে মনে করেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রথমবারের মত এমপি হয়েছিলেন মোহাম্মদপুর আসন (ঢাকা-১৩) থেকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তাকে কেনো মনোনয়ন দেওয়া হয়নি তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানামুখী বিতর্ক ও প্রশ্ন রয়েছে। 

তবে অনেকেই মনে করেন এটাও জাহাঙ্গীর কবির নানকের জন্য একটি বড় পরীক্ষা ছিল। কোন কিছু না পেলেই ঘুরে যাওয়া বা দলের সমালোচনা করার সংস্কৃতি তার মধ্যে আছে কিনা সেটি পরোখ করে নেওয়া হয়েছিল এই মনোনয়ন না দেয়ার মধ্য দিয়ে। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়েও তিনি যেভাবে দলের জন্য কাজ করেছেন সেজন্য পুরস্কার পেয়েছেন হাতেনাতে।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তারপর থেকেই দলের সভাপতির ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্তজন হিসেবে তিনি কাজ করছেন। তার নেতৃত্বে তিনি একটি পৃথক টিম করেছেন যদিও অনেক সমালোচক বলে সাধারণ সম্পাদকের বিকল্প একটি টিম তৈরি করা হয়েছে নানকের নেতৃত্বে।

যার ফলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এখন অনেকটাই অধিকারহীন। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই তার সঙ্গে একমত নন। যাই হোক না কেন আওয়ামী লীগের মাঝে এখন জোর গুঞ্জন চলছে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর জন্য নানকেই সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে। 

আরও পড়ুন