বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা আইন শিক্ষার্থীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। বহুনির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যারা এই ধাপে পৌঁছেছেন তাদের জন্য এটি কেবল আরেকটি পরীক্ষা নয়, বরং নিজেকে প্রমাণ করার চূড়ান্ত সুযোগ। তাই এই পরীক্ষার মানবণ্টন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা এবং শেষ রাতে সঠিক প্রস্তুতি—দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
- লিখিত পরীক্ষার মানবণ্টন: কাঠামো ও বিষয়বস্তু-
লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মূলত সাতটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও তা ছয়টি বিভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটি বিভাগে নির্দিষ্ট আইনের আলোকে প্রশ্ন থাকে এবং পরীক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
দেওয়ানি কার্যবিধি ও সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন নিয়ে গঠিত ‘ক’ বিভাগ সর্বোচ্চ ৩০ নম্বরের। এখানে তিনটি প্রশ্ন থাকে, যার মধ্যে যেকোনো দুইটির উত্তর দিতে হয়। ‘খ’ বিভাগে রয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির জন্য বরাদ্দ ১৫ নম্বর। ‘গ’ বিভাগে থাকে দণ্ডবিধি, যার জন্যও রয়েছে ১৫ নম্বর। ‘ঘ’ বিভাগে থাকে সাক্ষ্য আইন, এই বিভাগেও প্রশ্নের মান ১৫। ‘ঙ’ বিভাগে রয়েছে তামাদি আইন, যার পূর্ণমান ১৫। সবর্শেষে, ‘চ’ বিভাগে থাকে পেশাগত নৈতিকতা ও বার কাউন্সিল সংক্রান্ত আইন, যেখানে একটি প্রশ্ন থাকে ১০ নম্বরের। মোট নম্বর ১০০ এবং পরীক্ষার সময় চার ঘণ্টা।
পরীক্ষার আগের রাত: প্রস্তুতির কৌশল
পরীক্ষার আগের রাতটা অনেকের কাছেই হয়ে ওঠে সবচেয়ে অস্থির সময়। কিন্তু চাইলে এই সময়টাকেই আপনি নিজের প্রস্তুতির শ্রেষ্ঠ উপসংহার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
কী করবেন:
১. রিভিশন করুন সংক্ষিপ্ত নোট থেকে:
এসময় নতুন কিছু শিখবেন না। নিজের তৈরি সংক্ষিপ্ত নোট, ধারা-তালিকা, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রেফারেন্স দেখে এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নিন।
২. স্মার্ট পড়ার অভ্যাস:
গলার স্বরে পড়ুন, নিজের কাছে ব্যাখ্যা দিন। প্রয়োজনে কাউকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলুন, এতে ধারণা পরিষ্কার হয়।
৩. আগের বছরের প্রশ্ন দেখে নিন:
পরীক্ষায় বিগত বছরের প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে। কীভাবে প্রশ্ন এসেছে, কী চাওয়া হয়েছে সেটা ভালোভাবে দেখে নিন।
৪. মনকে শান্ত রাখুন:
এটা পরীক্ষার আগের রিহার্সালের মতো। বেশি উত্তেজিত হলে ঘুম হবে না, মাথাও কাজ করবে না।
কী করবেন না:
১. নতুন অধ্যায় খুলে বসবেন না।
২. অন্যের প্রস্তুতির সাথে তুলনা করবেন না।
৩. রাত জেগে পড়ার চেষ্টা করবেন না।
৪. টেনশনে খাবার বা ঘুম বাদ দেবেন না।
ঘুমের গুরুত্ব:
পরীক্ষার আগের রাতে অন্তত ৬–৭ ঘণ্টা ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া আপনি যা জানেন, সেটাও লিখতে পারবেন না। আপনার মস্তিষ্ক সতেজ থাকলে প্রশ্ন বুঝতে, তথ্য মনে করতে ও গুছিয়ে লিখতে সুবিধা হবে।
পরীক্ষার আগের রাতেই নিচের বিষয়গুলো প্রস্তুত করে রাখুন:
√ প্রবেশপত্র
√ কলম ও অতিরিক্ত কলম
√ জাতীয় পরিচয়পত্র
√ ঘড়ি (যদি অনুমতি থাকে)
√ পানির বোতল (যদি কেন্দ্র অনুমোদন দেয়)
√ হালকা ও পরিচ্ছন্ন পোশাক
একটি ভালো প্রস্তুতির শেষ অধ্যায় শুরু হয় আত্মবিশ্বাস থেকে। মানবণ্টনের স্পষ্ট ধারণা ও পরিকল্পিত রিভিশনের মাধ্যমে আপনি নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলতে পারেন। মনে রাখবেন সফলতা শুধু তথ্য জানার নয়, সেই তথ্যকে ঠিকভাবে ব্যবহারের দক্ষতাও। তাই পরীক্ষার আগের রাতটাই হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় সুবিধা, যদি আপনি তা সচেতনভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
লেখক: সাহিদা আক্তার, অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা।
ডিবিসি/এএনটি