ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপি ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ৬৩টি আসন স্থগিত রাখায় দলটির অভ্যন্তরে নানা সমীকরণ ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তালিকা ঘোষণার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এই আসনগুলোতে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
তবে অনেকের ধারণা, জোট ও ভোটের ভাগাভাগিতে এই আসনগুলোর একটি অংশ মিত্র দলগুলোকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে। তবে, মাঠের চিত্র ভিন্ন। স্থগিত রাখা প্রতিটি আসনেই বিএনপির একাধিক শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন, যারা জয়ের জন্য 'ধানের শীষ' প্রতীককেই অপরিহার্য মনে করছেন। প্রার্থী নির্বাচনে ভুল হলে আসনটি অন্যদের দখলে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়া-২ আসনে প্রার্থী না দেয়ায় গুঞ্জন ছড়িয়েছে। যদিও শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। গুঞ্জন আছে, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আসনটি ছাড়া হতে পারে। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষেই অটল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির হ্যাভিওয়েট প্রার্থী রুমিন ফারহানা ও সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিস ঠাকুর থাকলেও, মিত্রদল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবের নামও শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জোটের প্রার্থী মানতে নারাজ।
ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির ৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল এবং নিউ ইয়র্ক দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা আলোচনায় আছেন। তবে শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও পিরোজপুর থেকে এসে এই আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মোড় নিয়েছে।
খুলনার ৫টি আসনে প্রার্থী দিলেও খুলনা-১ আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম কবির ও মোহাম্মদ তৈয়েবুর রহমানসহ প্রায় অর্ধডজন প্রার্থী মরিয়া হয়ে লবিং করছেন। তারাও আসনটি জোটকে ছাড়তে নারাজ।
লালমনিরহাট-২ আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুল এবং কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমসহ চারজন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও আসনটি স্থগিত রাখায় নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর হতাশা দেখা দিয়েছে।
নাটোর-৩ আসনে অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু 'সবুজ সংকেত' পেয়ে প্রচারণা শুরু করলেও, প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় অন্য প্রত্যাশীরাও আশায় বুক বাঁধছেন। তাদের আশঙ্কা প্রার্থী দিতে ভুল হলে আসনটি জামায়াতের দখলে চলে যেতে পারে।
এদিকে, দিনাজপুর-৫ ও রাজবাড়ী-২ আসনে মনোনীত প্রার্থী নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তন ও স্থগিত আসনে প্রার্থীর দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন তারা।
যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা এবং দ্রুতই সব সমাধান হবে। যে কোনো সময় প্রার্থীর মুখ বদলে যেতে পারে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও স্থগিত ৬৩ আসনে দ্রুত প্রার্থী ঘোষণার প্রত্যাশায় রয়েছেন।
ডিবিসি/আরএসএল