বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত অধ্যাদেশ মন্ত্রিপরিষদে পাস হওয়ায় একে স্বাগত জানিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা। তবে বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি আর্থিক স্বায়ত্তশাসন এবং বিচারকদের নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনের পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২০শে নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: হাইকোর্টের মাইলফলক রায়, সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
কাঠামোগত ও আর্থিক স্বাধীনতা সভায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. কাজী জাহেদ ইকবাল বলেন, ‘দীর্ঘ যাত্রার পর বিচার বিভাগ স্বাধীনতার পথে হাঁটছে। তিন মাসের মধ্যে সচিবালয় তৈরির উদ্যোগ কাঠামোগত স্বাধীনতা দেবে। তবে বিচার প্রক্রিয়া যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য বিচার বিভাগের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সদিচ্ছা থাকা জরুরি।’
ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘সাদ্দাম হোসেন মামলার রায় বহাল থাকলে নিম্ন আদালতের কর্তৃত্ব সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে চলে আসবে, যা সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে সমন্বিত তহবিলের মাধ্যমে উচ্চ ও নিম্ন আদালতের ব্যয় বহনের জন্য বাজেট বরাদ্দ দেওয়া একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ।’
নির্বাহী বিভাগের প্রভাব ও বিচারক সংকট ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অসাংবিধানিক ঘোষণার পরও এর সম্পূরক রায় না পাওয়া এবং নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ নিম্ন আদালতের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করেছে। ১৮ কোটি মানুষের জন্য মাত্র ২,১৯৭ জন বিচারক একেবারেই অপ্রতুল। তাই বিচার বিভাগকে নির্বাহী প্রভাবমুক্ত করা এবং পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ অপরিহার্য।’
মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও দুর্নীতি রোধ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ফিদা এম. কামাল বলেন, ‘পৃথক সচিবালয় হলে আমরা স্বাধীন বিচার বিভাগ পাব বলে আশা করি, তবে এটি রক্ষায় বিচারক ও আইনজীবীদের নিরপেক্ষ মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার এ. এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘উচ্চ আদালতে সচিবালয় হলেও নিম্ন আদালতের দুর্নীতি রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। হাইকোর্টের রায় আশা জাগানিয়া হলেও বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনভাবে চিন্তার প্রবণতা থাকতে হবে।’ এ সময় তিনি বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের দাবি জানান।
সুপারিশ ও মনিটরিং সমাপনী বক্তব্যে ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বিভিন্ন রায় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারছি। সচিবালয়ের পাশাপাশি মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিচারকদের তথাকথিত শাস্তিমূলক বদলি কালচার থেকে বেরিয়ে সব জেলায় সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারকরা যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দিতে নির্ভয়ে কাজ করতে পারেন, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।’
ডিবিসি/পিআরএএন