সাধারণত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি গ্রেপ্তারের আদেশ না হয়, তবে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা যায় না। তবে পরোয়ানা ছাড়াও পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে যে অপরাধে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হবে, তা অবশ্যই আমলযোগ্য হতে হবে। আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ৫৪ ধারার অধীনে পুলিশ যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
৫৪ ধারার অধীনে ৯ ধরনের অপরাধে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ। এই ৯ ধরনের অপরাধীকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশের আদালতের আদেশ লাগে না, অবশ্য এই ৯ ধরনের বাইরে খুব কমই অপরাধী আছে।
জেনে নেওয়া যাক যে ৯ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিতে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যায়।
১. কেউ আমলযোগ্য অপরাধ করলে অথবা তাতে জড়িত থাকলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে।
২. কারও কাছে ঘর ভাঙার সরঞ্জামাদি থাকলে সেই ব্যক্তিকে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবে।
৩. সরকার কাউকে অপরাধী বলে ঘোষণা করলে অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের ক্ষতিকারক কোনো কাজ করলে তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে।
৪. মাদকদ্রব্য, অবৈধ অস্ত্র ও মুদ্রা বহন করলে।
৫. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধাদান বা আইনগত হেফাজত থেকে পলায়নকারী ব্যক্তি।
৬. সশস্ত্রবাহিনী থেকে পলায়নকারী ব্যক্তি।
৭. বিদেশে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি, যদি অপরাধটি বাংলাদেশে করলে অপরাধ হয়ে থাকে।
৮. কারামুক্তিপ্রাপ্ত আসামি যদি একই অপরাধ আবার করে।
৯. যে কোনো থানা থেকে আসামি গ্রেপ্তারের অনুরোধ পাওয়া গেলে।
এছাড়া ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৫৯ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের বিধান রয়েছে।
ভবঘুরে অথবা অভ্যাসগত অপরাধী অন্যকে ভীতি প্রদর্শন বা প্রদর্শনের চেষ্টা করলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ও ৫৬ ধারা অনুযায়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
এছাড়া কোনো ব্যক্তি নাম, পরিচয় ও বাসস্থান গোপন করলে ৫৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। নাম, পরিচয় পেলে মুচলেকাসহ এই বিধানের অধীন গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেবেন। ছেড়ে দেওয়ার একটি প্রতিবেদন তিনি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে দেবেন। ৪০ ঘণ্টার মধ্যে নাম পরিচয় না পাওয়া গেলে বা মুচলেকা প্রদানে ব্যর্থ হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অগ্রবর্তী করতে হবে।
ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপস্থিত করার সময় গ্রেপ্তারের স্থান থেকে আদালতে যাওয়ার সময় বাদে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা হবে।
আটকের পর ওই ব্যক্তির নাম, তারিখ ও সময় লেখা স্মারক প্রস্তুত করতে হবে। আটকের ১২ ঘণ্টার মধ্যে একজন নিকটাত্মীয় বা ক্ষেত্র বিশেষে বন্ধুকে জানাতে হবে। আটকের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাকে পরিচয় দিতে হবে এবং আটকের সময় যারা উপস্থিত থাকবেন, তাদের সামনে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে।
কোনো ব্যক্তিকে জখম অবস্থায় আটক করা হলে, তার কারণ উল্লেখ করতে হবে। একই সঙ্গে তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে এবং চিকিৎসকের কাছ থেকে একটি সার্টিফিকেট নিতে হবে। আটককৃত ব্যক্তি কোনো আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে চাইলে অথবা নিকটাত্মীয়র সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাকে সেই সুযোগ দিতে হবে।