ভারতের বহুল আলোচিত ১১টি হত্যা মামলা। যা এখনো রহস্যময়।
‘২০০৮ নয়ডা ডাবল মার্ডার কেস’ নামে পরিচিত এই ঘটনা সারা ভারতে হইচই ফেলে দেয়। ঘটনায় দু’টি নাম সামনে আসে। ১৪ বছরের আরুশি তলওয়ার এবং ৪৫ বছর বয়সি হেমরাজ বানজরে। নয়ডা সেক্টর ২৫-এ নিজের বাড়িতেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় পরিবারের একমাত্র মেয়ে আরুশিকে। অন্যদিকে, হেমরাজ ছিলেন বাড়ির কাজের লোক। ১৬ জুন আরুশির মৃতদেহ পাওয়ার ঠিক পরের দিন ওই বাড়ির ছাদে হেমরাজের আংশিক পচন ধরা দেহ খুঁজে পায় পুলিশ।
ঘটনাটিতে একাধিক অভিযুক্তের নাম সামনে আসে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আসল অপরাধী কে, তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও ঘটনায় আরুশির বাবা-মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাঁরা বেকসুর খালাস পেয়ে যান।
২০১৭-এ গুরুগ্রামের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শৌচাগারে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র প্রদ্যুম্ন ঠাকুরের গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিক ভাবে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে ওই স্কুলেরই একজন বাস কন্ডাক্টরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কিন্তু পরে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ঘটনাটির সঙ্গে যৌন নির্যাতনেরও যোগসূত্র খুঁজে পায়। যদিও সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ওই স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য শিশুটিকে খুন করে।
১৯৯৯ সালে দিল্লির জেসিকা লাল হত্যা রহস্য সাংবাদমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলে দেয়। সেই সময়ের একাধিক সংবাদপত্রে ঘটনাটির শিরোনাম হিসাবে লেখা হয় ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা।’
জেসিকা লাল ছিলেন দিল্লির একজন উঠতি মডেল। রাত ২টার সময় একটি পার্টিতে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানেই নির্মম ভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়। ঘটনায় মনু শর্মা নামে জনৈক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। জানা যায়, ওই পার্টিতে জেসিকা তাঁকে পানীয় পরিবেশন করতে অস্বীকার করেন। এরপরই মনু তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান।
২০১২ র মুম্বাইয়ের শিনা বরা হত্যাকাণ্ড অন্যতম একটি রহস্যজনক ঘটনা, যা সমগ্র দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে শিনার মা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তদন্তে জানা যায়, ইন্দ্রাণী, তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী পিটার এবং ইন্দ্রাণীর গাড়ি চালক শ্যামভার পরিকল্পনা মাফিক শিনাকে অপহরণ করে এবং পরে তাঁকে হত্যা করে তাঁর মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেন। ঘটনাটি আরও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে যখন ইন্দ্রাণী দাবি করেন শিনা ছিলেন তাঁর বোন!
জনপ্রিয় পাঞ্জাবি গায়ক, সুরকার ও গীতিকার অমর সিং চমকিলার মৃত্যু আজও রহস্যের অন্দরেই থেকে গিয়েছে। ১৯৮৮ সালের ৮ মার্চ চমকিলা, তাঁর স্ত্রী অমরজ্যোতকে দিনের আলোয় জনসমক্ষে হত্যা করা হয়।
পাঞ্জাবের মেশামপুরে অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে মোটরবাইকে আসা একদল অচেনা যুবক তাঁদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চমকিলা ও তাঁর স্ত্রীর। এই ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও তাঁর সহকর্মীরা দাবি করেন যে, চমকিলা তাঁর গানে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, মদ্যপান এবং ড্রাগ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় রাখতেন, তাই জন্যই তাঁকে হত্য করা হয়েছে।
বিখ্যাত ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন কূটনীতিক শশী তারুরের স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করকে দিল্লির একটি হোটেলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক ভাবে তারুর ভেবেছিলেন যে তিনি ঘুমোচ্ছেন। কিন্তু অনেক ডাকাডাকির পরও সাড়া না দিলে তারুর পুলিশে খবর দেন এবং মৃত্যুর ঘটনাটি সামনে আসে।
দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হলে জানা যায়, পুষ্কর আত্মহত্যা করেছেন। যদিও ডাক্তাররা জানান, তাঁর দেহে ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল এবং রক্তে অপরিমিত মাত্রায় ড্রাগ এর উপস্থিতি ছিল।
চাকো হত্যা মামলা কেরলের প্রাচীনতম অমীমাংসিত মামলাগুলির মধ্যে অন্যতম। নাটকীয় এই ঘটনাটি ঘটে ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি মাসে। ঘটনাটির সূত্রপাত চাকো নামে জনৈক ব্যক্তির থেকে। যিনি অনেকটা সুকুমার খুরাপ নামে এক ব্যক্তির মতো দেখতে ছিলেন।
সুকুমার বর্তমানে কেরলের মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালদের মধ্যে অন্যতম। জানা যায়, তিনি বহুদিন দেশ ছাড়া এবং তাঁর খবর সবারই অজানা। আট লক্ষ টাকার একটি বিমা হাতানোর জন্য চাকোকে সুকুমার ভেবে ভুলবশত খুন করা হয়। এক প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, সুকুমারের গাড়ির ভিতরেই তাঁকে খুন করা হয় এবং পরে তাঁর দেহ ওই গাড়িতেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের ১৮ অগস্ট মুম্বাইয়ের জনৈক ব্যবসায়ীর ছেলে আদনান পাটারওয়ালাকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক ভাবে তাঁকে অপহরণ করা হয় এবং দু’লক্ষ টাকা দাবি করা হয় অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু ঘটনাটি পরদিন জনসমক্ষে এলে তাঁকে হত্যা করা হয়। তাঁকে খুনের অপরাধে পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেন এবং পরে তাঁদের মধ্যে চারজন বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। রহস্য পুরোপুরি সামনে আসেনি।
নীরজ গ্রোভার হত্যাকাণ্ড হাড়হিম করা ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রথমে তাঁকে খুন করা হয় এবং তারপর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে তিনটি ব্যাগে ভরে জঙ্গলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
নীরজের বান্ধবী মারিয়া সুসাইরাজ প্রথমে তাঁর নিখোঁজের খবর নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানান। কিন্তু পরে দেখা যায়, তিনিও এই খুনের ঘটনায় জড়িত। এরপর পুলিশি তদন্তে জানা যায়, মারিয়ার বন্ধু এমিল রাগের মাথায় নীরজকে খুন করেন। কারণ তাঁর সন্দেহ ছিল, মারিয়ার সঙ্গে নীরজের কোনও সম্পর্ক রয়েছে।
বিখ্যাত রাজনীতিক ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রমোদ মহাজনকে সবাই চেনেন। তাঁর বিলাসবহুল জীবন সকলেরই কৌতূহলের কারণ ছিল। এ হেন ব্যক্তির খুন, তাও আবার নিজের ভাইয়ের হাতে! শোরগোল পড়ে যায় গোটা দেশে।
প্রমোদ মহাজনের ছোটো ভাই প্রবীণ মহাজন দাদাকে বাড়িতেই গুলি করেন। এরপর চাঞ্চল্যকরভাবে তিনি থানায় গিয়ে তাঁর অপরাধ স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রবীণ, আমি প্রমোদকে গুলি করেছি।’’এর পর প্রবীণের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় এবং ২০১০ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়।
২০১৭ সালে বেঙ্গালুরুর আয়কর বিভাগে কর্মরত এক ব্যক্তির ছেলে, ১৯ বছর বয়সি শরতের মর্মান্তিক পরিণতি আজও আমাদের শিহরিত করে এবং ভাবায়। শহরের বাইরে রামোহাল্লি লেকের কাছে হাত বাঁধা অবস্থায় শরতের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, প্রথমে তাঁকে অপহরণ করা হয় এবং যে দিন অপহরণ করা হয়, সেই দিনই তাঁকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তদন্ত নতুন মোড় নেয় যখন পুলিশ জানতে পারে অপহরণকারীরা ছিলেন তাঁরই বন্ধু! শরতের খুবই কাছের এক বন্ধু বিশাল ছিলেন এই ঘটনার মূলচক্রী।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা