কোনো সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস। সে প্রেমের সম্পর্ক হোক বা বন্ধুত্বের। এটি এমন একটি বস্তু যা চোখে দেখা যায় না। তার অস্তিত্ব কেউ অস্বীকার করবে এমন জোর নেই। অথচ সে এমনই ভঙ্গুর যে কোনো শব্দ ছাড়াই নিমেষে টুকরো হয়ে যায়। এই বিশ্বাস যদি ভেঙে যায়, তারপর নতুন করে কি আর সত্যিই কাউকে বিশ্বাস করা যায়?
সোমবার (৭ আগস্ট) আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক লাইভ এবং ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসেছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘বিশ্বাস করতে পারি না’।
প্রতি পর্বের আগে মনোবিদের কাছে চিঠি পাঠানো যায়। এই পর্বেও এমন অজস্র চিঠি এসেছে। কোনোটি বিশ্বাস ভাঙার, তো কোনোটি কারও চোখে অবিশ্বাসী হয়ে ওঠার। প্রথম চিঠিটি পাঠিয়েছেন মুন নামে একজন। তিনি লিখছেন, ‘কথা দিয়েছিল অন্যদের মতো ছেড়ে যাবে না। ভালোবাসাও ছিল। ৬ বছর সম্পর্কে থাকার পর হঠাৎ উধাও। না কোনো মান-অভিমান, ভুল বোঝাবুঝি, ঝগড়া— কিছুই হলো না। শুধু মানুষটা হঠাৎ একদিন সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে দিল। অমীমাংসিত এই অধ্যায় কাটানোর পর একা থাকতে ভালো না লাগলেও নতুন করে কাউকে বিশ্বাস করব কী করে? সে যদি আবার ছেড়ে চলে যায়?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দর্শক জানাচ্ছেন, ‘আমার নিজেকে আনলাভেবল মনে হয়। বহুবার প্রেম এসেছে জীবনে। আমি তাদেরকে আমার অনুভূতির কথা জানিয়েছি। পরবর্তীকালে বুঝেছি তারা কেউই সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে চান না। সম্পর্কের দায় নিতে চান না। আচ্ছা, আমার সঙ্গে কি শুধু সময় কাটানো যায়? আমার প্রেমে পড়া যায় না? নতুন করে যদি কেউ আসে প্রেম নিবেদন করতে বড় ভয় হয়। বিশ্বাস করতে পারি না।’
এমন বিশ্বাস ভাঙা, বিশ্বাস করা বা করতে না পারার অজস্র নজির আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। বিবাহিত সম্পর্কেও এমন বহু ঘটনা রয়েছে। বহু দিনের চেনা মানুষ যখনই সম্পর্কে আবদ্ধ হতে যাচ্ছেন, দু’জনের মধ্যে বিশ্বাসের প্রশ্নটি অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কখনো অবিশ্বাসের তির উল্টোদিকে থাকা মানুষটির দিকে, আবার কখনও অন্যের চোখে নিজেই অবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন বারবার।
অনুত্তমা বলছেন, ‘সম্পর্কের সমীকরণ কখন বদলে যাবে তা আগে থেকে টের পাওয়া মুশকিল। এমন তো হতেই পারে যে মানুষটি সারা জীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তা হয়তো সেই সময়ের জন্য সত্যি। সেই মুহূর্তে দেওয়া সত্যি কথা। কোনো সম্পর্কের মধ্যে থেকে কোনটি ঠিক বা কোনটি ভুল, তার পূর্বানুমানের মধ্যে থেকে যাওয়া কোনো ভ্রান্তি কিন্তু বিশ্বাস ভাঙতে পারে। বিবাহিত সম্পর্কের মধ্যে যে এমনটা ঘটছে না, তা নয়। সব সময় যে কেউ ইচ্ছে করে এমন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন, তা-ও নয়। আপাতদৃষ্টিতে যে সম্পর্কে আছেন, সেখানে কোনো খামতি না থাকা সত্ত্বেও নতুন মানুষ জীবনে আসতে পারে। সেই সম্পর্কে ভয়ঙ্কর জটিলতা আসবে। শুধু সেই সমস্ত পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। ভালোবাসার মানুষটি আপনাকে ছেড়ে অন্য কাউকে কেন ভালবাসবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। বিষন্ন লাগবে, তবু বিপন্ন হয়ে পড়া যাবে না। কোন মুহূর্ত কাকে কোথায় দাঁড় করাবে তা আগে কেউ বলতে পারে না। নদীর গতিপথের মতো তা সময়ে সময়ে বদলে যায়। আপনার চাওয়া-পাওয়া এবং উল্টোদিকের মানুষটির চাওয়া-পাওয়া এক না-ও হতে পারে। নিজের মধ্যে কোনো খামতি ছিল কিনা, তা হাতড়ে বেড়ানো বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। তাই নিজের প্রতি বিশ্বাস হারানো চলবে না। ভালোবাসার উপর থেকে বিশ্বাস হারানো চলবে না।’
সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন
ডিবিসি/আরপিকে