বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেতু হচ্ছে চীনের ডানয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ। এটি মূলত চীনের চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সাংহাই এবং নানজিং-এর মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে এবং এটি বেইজিং-সাংহাই হাই-স্পিড রেলওয়ের অন্যতম অংশ।
ডানয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজের মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৬৪.৮ কিলোমিটার বা ১০২ মাইল। প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই সুপার জায়ান্ট স্ট্রাকচার বা সেতুর নির্মাণ কাজ গত ২০০৬ সালে শুরু হয় এবং ২০১০ সালে এর কাজ সম্পন্ন হয়। তাছাড়া এই সেতু গত ২০১১ সালে জনসাধারণের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
ভূমি থেকে এর উচ্চতা হচ্ছে ১০০ ফিট এবং স্প্যান ২৬০ ফিট। এই সেতু চীনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ধানক্ষেত ও জলাভূমির ওপর দিয়ে ইয়াংজি নদীর মোটামুটি সমান্তরালে নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু হিসেবে এটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ইতোমধ্যেই নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে।
ডানয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ শুধু রেলওয়ে পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং বর্তমানে এটি চীনের দ্রুতগতির রেল নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা আসলে চীনের নিজস্ব উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চমাত্রায় প্রকৌশল দক্ষতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে।
সেতুটি নির্মাণের সময় প্রকৌশলীরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিশেষ করে জলাভূমি, নদী এবং ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের উপর দিয়ে এই সেতু নির্মাণ করা হয়। তাছাড়া স্থানীয় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি না করে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়।
এই সেতুটি বেইজিং-সাংহাই হাই-স্পিড রেলওয়ের অংশ হওয়ায় এটি চীনের পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি যাত্রীদের ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে এবং পণ্য পরিবহনের দক্ষতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে।
সেতুটি নির্মাণের সময় পরিবেশগত প্রভাব কমানোর জন্য বিশেষ প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, জলাভূমি এবং নদী অঞ্চলে সেতুর পিলার স্থাপনের সময় পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
আসলে চীনের এই ধরনের অতি উচ্চ পর্যায়ের সুপার মেগা প্রকল্পগুলি শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের চিত্রই প্রকাশ করে না, বরং এর পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়েও প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে। আর ঠিক তাই ডানয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ প্রকৃতই আধুনিক বিশ্বের একটি বিস্ময়কর কীর্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
সিরাজুর রহমান
শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর।
ডিবিসি/ এইচএপি