বায়ু দূষণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমছে প্রায় ৭ বছর। শুধু তাই না বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবেও বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। রাজধানী ঢাকায় বায়ু দূষণের কারণে নগরবাসীর গড় আয়ু কমে যাচ্ছে ৯ বছর। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট বায়ুর গুণমান বিবেচনায় আয়ুর এই প্রতিবেদন তুলে ধরে।
দেশের অন্য সব স্থানেও গড় আয়ু কমছে। একই কারণে দেশে নানা রোগে মারা যাচ্ছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। বাড়ছে ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগের মত জটিল অসুখ। জন্ম নেয়া শিশুদেরও ঠিকমত বিকাশ হচ্ছে না। প্রতিদিন সড়কের বিষাক্ত ধুলা আর ধোঁয়া মিশছে বাতাসে। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সেই বাতাস ঢুকছে মানবদেহে। এতে নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের বাতাস। বাতাসে যে ক্ষুদ্র বস্তুকণা ফুসফুসে বাধা সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য রোগবালাই ডেকে আনে সেসব কণাকে পিএম ২.৫ বলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশের মধ্যে চারটি দক্ষিণ এশিয়ায়। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তানে দূষণ কমানো হলে গড়ে প্রতি ব্যক্তি ৫ বছরের বেশি বাঁচবে।
ইপিআইসি প্রবর্তিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (একিউএলআই) নির্ণয়ে গবেষকেরা বাতাসে পিএম ২.৫ (ক্ষতিকর ভাসমান কণা যা ফুসফুসের ক্ষতি করে) এর মাত্রা হিসাব করতে স্যাটেলাইট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। তার ভিত্তিতে দেওয়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশকেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের শিকার দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বায়ু দূষণের এই সূচকের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার পাঁচ দেশের চারটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। আর বায়ু মানের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হচ্ছে ভারতের নয়াদিল্লি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ু দূষণের কারণে বৈশ্বিক গড় আয়ু মাথাপিছু দুই বছর এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গড় আয়ু পাঁচ বছর করে কমছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এই গবেষণা ধরে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ৯৭ শতাংশ মানুষ এমন এলাকায় বসবাস করছে, যেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা সহনীয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আর তা মানুষের গড় আয়ু কমার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখছে, তা ধূমপান, এইডস কিংবা সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি।
ইপিআইসির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া বায়ু দূষণের সীমা (দূষণকারী কণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম) প্রয়োগ করে হিসাব করা হয়, তাহলে দেশে মাথাপিছু গড় আয়ু ৬ বছর ৯ মাস করে কমছে। আর কিছু এলাকায় দূষণের মাত্রা এতই বেশি যে সেখানে গড় আয়ু কমার পরিমাণ ৯ বছর।
বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিজেদের নির্ধারিত সীমা (প্রতি ঘনমিটারে দূষণকারী কণার উপস্থিতি ১৫ মাইক্রোগ্রাম) এবং ডব্লিউএইচওর সীমা - দুটোই অতিক্রম করে গেছে।
গবেষকেরা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শিশু ও প্রসূতির অপুষ্টির কারণে গড় আয়ু প্রায় দেড় বছর কমে যাওয়া এবং ধূমপানের কারণে গড় আয়ু দেড় বছর কমে যাওয়ার সঙ্গে বায়ু দূষণে গড় আয়ু কমার তুলনা টেনেছেন।
ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এই বায়ু দূষণ জীবনকাল সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকার বাসিন্দারা গড়ে ৮ বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন। চট্টগ্রামে আয়ু কমছে সাড়ে ছয় বছর করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সবক’টিতেই বাতাসে দূষণকারী কণার উপস্থিতি ডব্লিউএইচওর সহনীয় সীমার বেশি।
দক্ষিণ এশিয়ার বিপুল জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এই অঞ্চলের গড় আয়ু হ্রাসের পরিমাণ বিশ্বের মোট আয়ুষ্কালের ৫২ শতাংশ এবং এটা হচ্ছে কারণ এখানকার বাতাসে ডব্লিউএইচওর নির্দেশিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে দূষণকারী কণা উপস্থিতি।