ধর্ম, ইসলাম

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম (بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ) এর গুরুত্ব ও ফজিলত

ডিবিসি ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ১০ই এপ্রিল ২০২৪ ০২:২০:১৪ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

মহান আল্লাহ তা’লার প্রেরিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে অন্তর্ভুক্ত ১১৪টি সূরায় মোট ৬,৬৬৬টি আয়াত রয়েছে। যার মধ্যে আল্লাহর কাছে একটি অধিক মর্যাদাপূর্ণ আয়াত বা বাক্য রয়েছে, যা একটি সূরার পূর্ণাঙ্গ আয়াত তো বটেই, তার সাথে একমাত্র সূরা আত-তাওবাহ ব্যতীত অন্য ১১৩টি সূরার শুরুতে পাঠ করতে হয়। আর সেই পবিত্র আয়াত বা বাক্যটি হচ্ছে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম (بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ)। এটি পবিত্র কোরআনের সূরা নামলের একটি (৩০ নম্বর) পূর্ণাঙ্গ আয়াত এবং অন্য সকল সূরা পাঠের শুরুতে অবশ্য পাঠ্য একটি বাক্য।

পবিত্র কোরআনের আরবি আয়াত ‘বিসমিল্লাহি (র) রহমানি (র) রহিম’ এর বাংলা অনুবাদ হচ্ছে ‘পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে’। এই আয়াতটি সূরা ফাতিহার অংশ না কি সূরা নামলের অংশ, তা নিয়ে মুসলিম জাহানের ইমামগণের মধ্যে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও তার অনুসারী ইসলামিক চিন্তাবিদ ও আলেমদের মতে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ (بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ) সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরার অংশ নয়। এটি সূরা নামলের একটি আয়াত। আসলে অধিক বরকত লাভের উদ্দেশ্যে ও দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করার জন্য তা নাজিল করা হয়েছে। পবিত্র আল কোরআন পাঠের সময় এটি পাঠ করা এবং নামাজের মধ্যে পড়া আবশ্যক।
 

তবে যাই হোক না কেন, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ কিন্তু সূরা নামলের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়াত। আর এ বিষয়ে ইমামগণ ও আলেমদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। তবে ইসলামের আরেক বিখ্যাত ইমাম শাফেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক ও তাদের অনুসারী আলেমদের অভিমত হলো যে, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ সূরা ফাতিহার অংশ। এজন্য তারা অবশ্য সালাতে সশব্দে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ পড়তেন এবং তাদের অনুসারীরা এখনও পর্যন্ত এই নিয়মে সালাত আদায় করে থাকেন। তাছাড়া অন্য সূরার প্রতিটি আয়াতের মতো এর পবিত্রতা ও সম্মান রক্ষা করা ওয়াজিব। ওজু ছাড়া এটি স্পর্শ করা জায়েজ নয়।
 

মূলত প্রাক-ইসলামি যুগে মক্কার অধিবাসীরা বিভিন্ন দেব-দেবীর নাম নিয়ে যেকোনো কাজ শুরু করতেন। তবে মহান আল্লাহর পবিত্র কোরআনে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ আয়াত নাজিল হওয়ার পর পূর্বের সকল ধ্যান-ধারণা বাতিল করে দেন আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।মহান আল্লাহর ইশারায় ও নির্দেশে তিনি প্রতিটি শুভ ও ভালো কাজের শুরুতে আয়াতটি ও বিশেষ করে ‘বিসমিল্লাহ’ শব্দটি বলা বা পাঠ করার নিয়ম চালু করেন। তখন থেকে আজ অব্ধি এটি চালু রয়েছে মুসলিম সমাজে। যা কিনা কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে ইনশাআল্লাহ।
 

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা প্রকৃত মুমিনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের প্রিয় নবি হজরত মোহাম্মদ (সা.) প্রতিটি ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ দ্বারা আরম্ভ করতেন। প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা আমাদের মহানবি হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর একটি সুন্নতও বটে। একটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া না হলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১৪/৩২৯; রওজাতুল মুহাদ্দিসিন : ৬৪৫)।

তাছাড়া ‘বিসমিল্লাহ’ এর গুরুত্ব বোঝানোর ক্ষেত্রে মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে।’ (মুসলিম : ৫৩৭৬)। তাই আমরা সকলে আমাদের প্রতিটি ভালো ও শুভ কাজ অবশ্যই নবিজির সুন্নত ‘বিসমিল্লাহ’ বলেই শুরু করব ইনশাআল্লাহ।
 

অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আরবি শব্দ ‘বিসমিল্লাহ’ হলো এমন একটি বাক্যাংশ বা শব্দ, যা প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে পাঠ করতে হয়। তার পাশাপাশি পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের শুরুতেও ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ বলা হয়। আর এই ‘বিসমিল্লাহ’ দিয়েই একমাত্র সূরা সূরা আত-তাওবাহ ব্যতীত সকল সূরা শুরু করা হয়েছে। মহান আল্লাহর নির্দেশিত ও ইসলামি বিধান মতে সমর্থিত কাজ শুরুর আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে থাকেন সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তবে যেকোনো অন্যায় কাজ ও ইসলাম বহির্ভূত কাজের জন্য ‘বিসমিল্লাহ’ বলা কিন্তু আল্লাহর সাথে সরাসরি প্রতারণা ও বিদ্রোহ করার মতো ভয়াবহ পাপ কাজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। যা থেকে আমাদের অবশ্যই সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।
 

এখানে প্রকাশ থাকে যে, প্রত্যেকটি শুভ ও ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করার নির্দেশ দিয়ে মূলত মানুষের গোটা জীবনের গতিবিধি ও কর্মকাণ্ডকে অন্য সব কিছুর দিক থেকে সরিয়ে নিয়ে একমাত্র মহান আল্লাহর দিকে ধাবিত করে। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে প্রতিটি ভালো কাজ শুরু করার মাধ্যমে একজন মুমিন ব্যক্তি প্রতি মুহূর্তেই মহান আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে নেন। আর তাই একজন মুসলিমের অস্তিত্ব ও যাবতীয় কাজকর্ম মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও সাহায্য ছাড়া হতে পারে না। আর এ নিয়তের ফলে মুমিন ব্যক্তির বাস্তব জীবনের প্রতিটি ইতিবাচক ও ভালো কাজই কিন্তু একটি সুন্দর ইবাদতে পরিণত হয়ে যায়। যা আমাদের জীবনকে আরো সুন্দর ও বরকতময় করে তোলে।
 

সূত্র: মাআরেফুল ক্বোরআন/মুসলিম/মুসনাদে আহমাদ

লেখক: সিরাজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন