জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে বাংলার আকাশকে শত্রুমুক্ত করার অদম্য প্রয়াসে আত্মদানকারী বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানকে। আজ তার ৫৪তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে তিনি দেশের মুক্তির জন্য এক অসম দুঃসাহসিক অভিযানে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের প্রতি অসামান্য অবদান ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়, মতিউর রহমান তাদের মধ্যে অন্যতম।
১৯৪১ সালের ২৯শে অক্টোবর ঢাকার আগা সাদেক রোডে জন্মগ্রহণ করেন মতিউর রহমান। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কমিশন লাভ করার পর তিনি পেশাগত জীবনে সততা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মতিউর রহমান ছিলেন করাচির মৌরিপুর (বর্তমান মাসরুর) বিমান ঘাঁটিতে ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত।
দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য তিনি ছিলেন উদগ্রীব। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর ২০শে আগস্ট তিনি একটি টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান (‘ব্লু বার্ড ১৬৬’) হাইজ্যাক করার সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষানবিশ পাইলট রশিদ মিনহাজকে নিয়ে বিমানটি যখন রানওয়েতে চলতে শুরু করে, তখন মতিউর রহমান কন্ট্রোল টাওয়ারের অনুমতি পেয়ে বিমানে ওঠেন এবং কৌশলে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেন। তার লক্ষ্য ছিল বিমানটি নিয়ে ভারতে অবতরণ করে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া।
কিন্তু মাঝপথে রশিদ মিনহাজ জ্ঞান ফিরে পেয়ে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করলে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বিমানটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের থাট্টা এলাকায় বিধ্বস্ত হয় এবং বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান শাহাদত বরণ করেন।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের এই আত্মত্যাগ মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে ইচ্ছুক হাজারো বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তার মরদেহ দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা হয় এবং পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়।
ডিবিসি/এনএসএফ