বাংলাদেশ, জাতীয়

বীর প্রতীক তারামন বিবি

ডেস্ক প্রতিবেদন

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ১লা ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:৫৭:৫৩ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রেখেছিলেন নারী মুক্তিযোদ্ধারাও। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে যেমন অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে গুপ্তচর হয়ে হানাদারদের ক্যাম্পের গোপন খবর পৌঁছেছেন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে। মুক্তিযুদ্ধের তেমনই এক দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি।

আজ ১লা ডিসেম্বর। বিজয়ের মাস শুরু আজ থেকে। আজ রণাঙ্গনের দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরপ্রতীক তারামন বিবির প্রয়াণদিবস। দুজন নারী মুক্তিযোদ্ধা পেয়েছিলেন বীর প্রতীকের খেতাব। তারামন বিবি তার মধ্যে একজন।

 

তার প্রকৃত নাম মোছাম্মৎ তারামন বেগম। একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। এই কিশোরী বয়সেই তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে।

 

কুড়িগ্রাম ও এর আশপাশের এলাকা ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীন। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তারামন ক্যাম্পে এসেছিলেন রান্নাবান্নার কাজে, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে।  তাঁকে ধর্মকন্যা বানিয়ে মুহিব হাবিলদার নিয়ে আসেন ক্যাম্পে।

 

পরবর্তী সময়ে শুধু তিনি রান্নার কাজেই যুক্ত ছিলেন না, দেশকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে ক্যাম্পের অন্যান্য পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখাসহ পাকিস্তানি বাহিনীর খবর সংগ্রহ করতে ভূমিকা পালন করেন। সে জন্য তিনি কখনো শরীরে কাদামাটি,  কালি,  ময়লা-আবর্জনা লাগিয়ে পাগল সেজেছেন, আবার কখনো মানসিক-শারীরিক প্রতিবন্ধী, অন্ধ ও বোবা সেজে পাকিস্তানি সেনাদের সামনে দীর্ঘ হাসি কিংবা কান্নার অভিনয় করে শত্রুসেনাদের খবর নিয়ে এসেছেন।  সেই ভাবনা থেকে তিনি সম্মুখযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি ওই এলাকার কোদালকাঠির এক সম্মুখযুদ্ধে একাই প্রায় পাঁচ-ছয়জন পাকিস্তানি সেনাকে খতম করেছিলেন।

 

মোহনগঞ্জ, তারাবর কোদালকাটি, গাইবান্ধার ফুলছড়ির বহু বিখ্যাত যুদ্ধে পুরুষ সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখসমরে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন তারামন বিবি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে ১৯৭৩ সালে  তৎকালীন সরকার তাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু এ খবরও জানতে পারেননি তারামন। একসময় পুরোপুরি লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন তিনি।

 

১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে প্রথম তার সন্ধান দেন। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলার এই অকুতোভয়ী নারী মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।

 

বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এই কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধাকে।

আরও পড়ুন