বিয়ের পর একটি নতুন জীবনের সূচনা হয়। পরিবর্তিত হয় অনেককিছুই। অনেক নতুন অভ্যাসে মানিয়ে নিতে হয়। ছাড় দিতে হয় অনেকক্ষেত্রে। বিয়ের পরে সম্পর্কটি সুন্দর করার প্রচেষ্টা থাকে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই। কিন্তু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হয়ে যেতেই পারে। তবে বলা হয়, বিয়ে মানেই হলো মেনে নেয়া আর মানিয়ে নেয়া।
বিয়ের পর নারীদের জীবনে আসে আমূল পরিবর্তন। পরিচিত পরিবেশ থেকে নতুন পরিবেশে পড়তে হয় তাদের। নতুন পরিবেশে এসে অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা তারা। তখন নিজের অজান্তেই অনেক ভুল করে ফেলেন তারা। হয়ত সেটি থাকে সুন্দর কিছু করার প্রচেষ্টা। কিন্তু তা প্রয়োগের ভুলে হয়ে যায় নেতিবাচক কিছু।
অনুমান করার অভ্যাস নারীদের বেশ পুরনো। হয়তো অনেকক্ষেত্রে সেই অনুমান সত্যিও হয়ে যায়। তবে এই অভ্যাস থেকে সরে আসাই উত্তম। কারণ স্বামীর সঙ্গে সরাসরি কথা না বলে কেবল অনুমানের ভিত্তিতেই কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে তা কখনো সুফল বয়ে আনে না। কারও মনের কথা জানার জন্য তার সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে হয়। আপনার অনুমানের কারণে সংসারে অশান্তিও সৃষ্টি হতে পারে। তাই মনে কোনো প্রশ্ন এলে, সন্দেহ তৈরি হলে খোলাখুলি কথা বলুন। এটি সম্পর্ক সুন্দর রাখতে কাজ করবে।
যেকোনো সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব ঘটতেই পারে। কিন্তু সমস্যার সমাধান করার পরিবর্তে সেটি এড়িয়ে যাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে। কিছু নারী সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দ্বন্দ্ব এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সমস্যা দেখা দিলে শুরুতেই সমাধান করে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
বেশিরভাগ নারীই স্ত্রী এবং মা হিসাবে তার ভূমিকাকে নিজের মঙ্গলের চেয়ে অগ্রাধিকার দেয়। যদিও পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পরিবারের প্রতি অনুভূতি বজায় রাখাও অপরিহার্য। কিন্তু ব্যক্তিগত আগ্রহ, শখ, লক্ষ্য বা নিজের যত্নের প্রতি অবহেলা করার অভ্যাস দাম্পত্য জীবনের তৃপ্তি কমিয়ে দিতে পারে। তাই নিজেকে সমৃদ্ধ করা এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ঘনিষ্ঠতা মানে কেবল শারীরিক ঘনিষ্ঠতা নয়; এটি মানসিক সংযোগকেও বোঝায়। অনেক নারীর বিয়ের পরে শারীরিক ও মানসিক ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি উপেক্ষা করে বা এর গুরুত্বকে অবহেলা করে। নিয়মিত মন খুলে কথা বলা, ছোট ছোট অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া এবং আবেগ প্রকাশ করার অভ্যাস দু’জনের মধ্যে গভীর সংযোগ তৈরি করে। এই দিকগুলোকে উপেক্ষা করলে তা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে।
সমস্ত মানসিক, সামাজিক এবং আর্থিক চাহিদা পূরণ করার জন্য কেবল স্বামীর দিকেই তাকিয়ে থাকাটা অবাস্তব প্রত্যাশা হতে পারে। কারণ একজন মানুষ কখনোই আরেকজনের সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না। তার নিজেরও কিছু স্বপ্ন থাকতে পারে। একথা সত্যি যে, একজন পুরুষের জীবনে তার স্ত্রী জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বলে স্ত্রীর সুখ এবং পরিপূর্ণতার একমাত্র উৎস কেবল স্বামীকেই ধরে নিলে তা হতাশার কারণ হতে পারে। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অবশ্যই প্রত্যাশা থাকবে। তবে তা যেন তার ওপর চাপ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
হুট করে কোনকিছু পরিবর্তন করতে চাইবেন না। অনেককিছুই হয়ত আপনার মনমত হবেনা। কোনকিছু পরিবর্তন করতে চাইলে সেটার জন্য তাড়াহুড়া করবেন না। সময় নিন, চিন্তা করে দেখুন যে পরিবর্তনের কথা ভাবছেন সেটি সার্বিক দিক দিয়ে পুরো পরিবারের উপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে। সবদিক খেয়াল করে সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করবেন। হটকারিতা করার দরকার নেই। তাহলে সেটি কোন সুফল বয়ে নিয়ে আসেনা।
সংসারে শান্তি বজায় রাখতে হলে কিছু স্বার্থত্যাগ করতেই হয়। সেক্ষেত্রে প্রচেষ্টা থাকতে হবে দুজনেরই। বিয়ের পর দুজন দুজনের ভাল খারাপ দিক জেনে শুধরানোটাই সমীচিন হয়। এতে সংসারে শান্তি বজায় থাকে।