কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের এক আবাসিক ছাত্রকে জোরপূর্বক হলের সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় শনিবার (১ এপ্রিল) সকালে সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী মাহাদী হাসান বলেন, আমি বিগত কয়েকদিন যাবৎ আমার আবাসিকতাপ্রাপ্ত কক্ষে অবস্থান করছিলাম। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিদ্দিক (পরিসংখ্যান বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) ভাইয়ের মাধ্যমে তরুণ ভাই (বাংলা বিভাগ, ২১০৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), ফাহিম ফয়সাল ভাই (ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) ও রাজু ভাই (বাংলা বিভাগ, ২০১৮-১৯) আমাকে হলের ৪২৭ নম্বর কক্ষে আসতে বলে। আমি তখন ইফতার শেষ করে নামাজের জন্য যাচ্ছিলাম। ফোন পেয়ে আমি দ্রুত হলে চলে আসি।
সেখানে পৌঁছে দেখতে পাই, আমার বই, খাতা, তোষক ও বালিশ রুমের বাইরে করিডোরে পড়ে আছে। সেখানে আগে থেকেই তরুণ ভাই, ফাহিম ভাই, রাজ ভাইসহ আরও একজন ভাই উপস্থিত ছিলেন। আমি সালাম দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করি। প্রথমে ফাহিম ভাই আমাকে বলে, ‘তুই মাহাদী?’ আমি হ্যাঁ বলি। তারপর তিনি আমাকে বলেন, ‘তুই কোন কক্ষে থাকিস?’ আমি বলি, ‘ ৪২৮ আমার আবাসিক কক্ষ। আমি ওই কক্ষেই আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অবস্থান করছি। তখন ফাহিম বলেন, ‘আগে কোথায় ছিলি?’ আমি বলি, ‘৩০৮-এ মেহেদি হাসান তানভীরের অতিথি হিসেবে ওই কক্ষে ছিলাম। এখন আমার আবাসিকতা কক্ষ নং ৪২৮ বরাদ্দ হয়েছে, আমি এখানেই থাকব।’
তখন রাজু ভাই আমাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘তুই কে! তোকে আগে কখনও হলে দেখিনি তো। কে তোরে হলে তুলেছে? আর ওইসব আবাসিকতার কাহিনি বাদ দে, আমরা যা বলব হলে তাই হবে।’ এ সময় তরুণ ভাই বলে, ‘আমারে চিনিস তুই, আমি কে? এখনও ভালোয় ভালোয় ৪২৮ থেকে সবকিছু নিয়ে কোথায় যাবি যা, ৩০৮ এ থাকবি নাকি কোথায় থাকবি আমরা জানি না। পরে তিনি রুমের বাইরে করিডোরে ফেলে দেওয়া আমার বই, খাতা, তোষক বালিশসহ আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এইখানে তোর সবকিছু আছে, নিয়ে চলে যা।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত তরুন, ফাহিম ফয়সাল ও রাজু শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফাহিম ফয়সাল বলেন, আমরা হলের সিট থেকে কাউকে বের করে দেইনি। ওই ছেলে আগে থেকে ৩০৮ নং রুমে থাকত৷ যেহেতু এখানে অর্থাৎ ৪২৮ নং রুমে একজন থাকছে তাই তাকে আগের ৩০৮নং রুমে থাকতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আরেক অভিযুক্ত তরুণ বলেন, আমার মূলত পরীক্ষা ছিল। ওই শিক্ষার্থী আগে যেখানে থাকত অর্থাৎ ৩০৮ নং রুমে আরেকজনকে তুলে দিয়ে ৪২৮ নং এ উঠেছিল। তাই আমরা এই বিষয়টি সমাধানের জন্য গিয়েছিলাম।
বিষয়টি নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, আমি তো বিষয়টি জানি না। আগে খোঁজ নিতে হবে, না জেনে তো কিছু বলতে পারবো না। ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৈধ সিটে তুলতে সাহায্য করে, কখনো কারো বৈধ সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার ছাত্রলীগ রাখে না।
এ বিষয়ে লালন শাহ হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. ওবাইদুর রহমান বলেন, আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। সবাই আলোচনা করে খোঁজ খবর নিয়ে তারপর ব্যবস্থা নিব।
ডিবিসি/কেএমএল