বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব মধু পূর্ণিমা আজ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে।
এটি মূলত বর্ষাবাসের সময় উদযাপিত একটি বিশেষ তিথি, যা বৌদ্ধ ভিক্ষু ও গৃহীদের মধ্যে একতা ও মিলনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
এই দিনটির মূল তাৎপর্য হলো বুদ্ধের জীবদ্দশার একটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণ করা। কথিত আছে, একবার বুদ্ধ যখন পারিলিয়াকা বনে অবস্থান করছিলেন, তখন দুটি প্রাণী একটি হাতি ও একটি বানর তাকে সেবা করেছিল। বানরটি বুদ্ধকে বনের মধু এনে দিয়েছিল এবং হাতিটি এনেছিল জল।
বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, এই ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ পারিলেয়া বনে বর্ষাযাপনকালে একটি হাতি প্রতিদিন ফল সংগ্রহ করে বুদ্ধকে দান করতো। এ সময় হস্তিরাজ কর্তৃক বুদ্ধকে সেবা করতে দেখে বনের একটি বানরেরও বুদ্ধকে পূজা করার ইচ্ছা জাগে।
ভাদ্র পূর্ণিমাতে সে একটি মৌচাক সংগ্রহ করে বুদ্ধকে দান করে। মৌচাকে মৌমাছির ছানা ও ডিম থাকায় বুদ্ধ প্রথমে মধু পান করেননি। বানর তা বুঝতে পেরে মৌচাকটি নিয়ে ছানা ও ডিম পরিষ্কার করে পুনরায় বুদ্ধকে দান করলে এবার বুদ্ধ মধু পান করেন।
মধুপান করতে দেখে বানর খুশিতে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে বৃক্ষ শাখা থেকে বৃক্ষশাখায় লাফাতে লাগলো। হঠাৎ অসাবধানতাবশত বৃক্ষের শাখা ভেঙে বানর মাটিতে পড়ে গাছের গোড়ায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মারা যায়।
এই ঘটনাকে স্মরণ করে বৌদ্ধরা প্রতি বছর মধু পূর্ণিমা পালন করে, যা প্রাণীজগতের প্রতি ভালোবাসা এবং প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থানের বার্তা বহন করে।
মধু পূর্ণিমা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিহারে বিশেষ প্রার্থনা সভা, পঞ্চশীল গ্রহণ, ভিক্ষু সংঘকে মধু ও অন্যান্য সামগ্রী দান, এবং ধর্মীয় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
সকালে থেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষেরা তাদের নিজ নিজ বিহারে সমবেত হতে শুরু করেন। তারা বুদ্ধের মূর্তির সামনে মোমবাতি, ফুল ও ধূপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন এবং ভিক্ষুদের জন্য মধুপানীয় ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসেন।
এই উৎসব একদিকে যেমন ধর্মীয় আচারের অংশ, তেমনি অন্যদিকে এটি মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বাড়াতে সাহায্য করে। মধু পূর্ণিমা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানবতা ও সহানুভূতির বন্ধন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাণীর জন্য অপরিহার্য।
ডিবিসি/এমইউএ