ভারত ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির দিকে ইঙ্গিত করে, বেইজিং ভারতীয় সার, রেয়ার আর্থ খনিজ ও ম্যাগনেট এবং টানেল বোরিং মেশিনের ওপর থেকে রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার (১৮ই আগস্ট) নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে এক বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই আশ্বাস দেন। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেইজিং ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং কিছু পণ্য, বিশেষ করে সারের রফতানি আবার শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ইকোনোমিক টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এসকল তথ্য পাওয়া যায়।
গত মাসে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে ভারত এই তিনটি পণ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে জোর দিয়েছিল। ভারত জানিয়েছিল, চীনের আকস্মিক সার রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তে রবি মৌসুমে ডি-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। একইভাবে, চীনের কারখানায় তৈরি এবং ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রকল্পে ব্যবহৃত টানেল বোরিং মেশিন আটকে দেওয়ায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন যে বেইজিং ভারতের অনুরোধে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে এবং তিনটি পণ্যের ওপর থেকেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিন দিনের সফরে নয়াদিল্লিতে আসা ওয়াং ই মঙ্গলবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করবেন। এছাড়াও তার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে।
বৈঠকে ওয়াং ই বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনো একটি দেশের একতরফা জবরদস্তিমূলক আচরণের কারণে মুক্ত বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা আজ তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যদিও তিনি সরাসরি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি, তবে তার এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই ইঙ্গিত করে বলে মনে করা হচ্ছে।
ওয়াং ই আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে ভারত ও চীনের মতো দুটি বৃহৎ শক্তির (যাদের সম্মিলিত জনসংখ্যা ২৮০ কোটি) উচিত বিশ্বের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া। তিনি ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, "একতাই শক্তি। একতাবদ্ধ হয়েই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বহুমুখী বিশ্বে নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করতে হবে।"
বৈঠক শেষে এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারত চীনের সঙ্গে একটি ‘স্থিতিশীল, সহযোগিতামূলক এবং বিচক্ষণ সম্পর্ক’ স্থাপন করতে আগ্রহী। এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাতেও অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিবিসি/এনএসএফ