বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ভারতের নৌবাহিনীতে এবার যুক্ত হলো ৬টি অত্যাধুনিক এমএইচ-৬০ আর ‘সি হক’ হেলিকপ্টার

ডিবিসি ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ৮ই মার্চ ২০২৪ ০৩:০২:৫০ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

গত ৬ই মার্চ বুধবার ভারতের নৌবাহিনীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৬টি অত্যাধুনিক এমএইচ-৬০ আর ‘সি হক’ (সিকরস্কি ব্ল্যাক হক) হেলিকপ্টার হস্তান্তর করা হয়। মূলত ওইদিন ভারতের কেরালা রাজ্যের কোচিতে নৌবাহিনীর এয়ার উইংস আইএনএস গরুড়-এ আনুষ্ঠানিক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মাল্টিরোল (এন্টিসাবমেরিন এন্ড এন্টিশীপ ওয়ারফার) হেলিকপ্টারের প্রথম স্কোয়াড্রন ‘কমিশন’ প্রদান করা হয়। বর্তমানে সাগরের বুকে লুকিয়ে থাকা সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসের উপযোগী হেলিকপ্টারের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে এই হেলিকপ্টারের নাম।

গত ২০২০ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় নৌবাহিনীর জন্য ২.৬ বিলিয়ন ডলার চুক্তিমূল্যে মোট ২৪টি অত্যাধুনিক এমএইচ-৬০আর সি-হক সিরিজের মাল্টিরোল হেলিকপ্টার ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করা হয়। যার আলোকে এই জাতীয় নেভাল বেসড হেলিকপ্টারের প্রথম স্কোয়াড্রন (৬টি) ভারতের নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হলো। আর ওয়েপন্স এবং ট্রেনিং প্যাকেজসহ প্রতিটি সিকরস্কি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের প্রতিটির মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০৮.৩৩ মিলিয়ন ডলার। আর অবশিষ্ট ১৮টি হেলিকপ্টার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ভারতের কাছে সরবরাহ করবে আমেরিকা।


আমেরিকার অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন কর্পোরেশনের তৈরি এমএইচ-৬০আর সিরিজের ‘রোমিও’ সী-হক  হচ্ছে একটি মেরিটাইম এন্ড অ্যাডভান্স সী-বেসড হেলিকপ্টার। এটিকে মূলত মহাসাগরের বুকে লুকিয়ে থাকা সাবমেরিন এবং যুদ্ধজাহাজকে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে ধ্বংস করার উপযোগী করে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটিকে কার্যত মার্কিন নেভির পূর্বের এমএইচ-৬০বি/এফ সিরিজের হেলিকপ্টারের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে সার্ভিসে আনা হয়।

 

আমেরিকার তৈরি এই মেরিটাইম হেলিকপ্টারটিকে সাগর ও মহাসাগরে এন্টি-সাবমেরিন ওয়ারফার (এএসডব্লিউ), এন্টি-সার্ফ ওয়ারফার (এএসইউডাব্লু), সার্চিং এন্ড রেসকিউ (এসএআর), নৌ যুদ্ধে সরাসরি সহায়তা (এনজিএফএস), মহাসাগরে নজরদারি, যোগাযোগ, রসদ সরবরাহ এবং উদ্ধারকালীন মুহূর্তে সৈন্য বা যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম। এটি প্রথম সার্ভিসে আসে ১৯৮৪ সালে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আনুমানিক মোট এক হাজারের কাছাকাছি বিভিন্ন সিরিজের এমএইচ-৬০ সী-হক হেলিকপ্টার তৈরি করা হয়।


আকাশে ছুটে চলার জন্য এই হেলিকপ্টারটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী দুটি জেনারেল ইলেকট্রিক টি-৭০০-জিই -৪০১-সি টার্বোসেফট ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে। যা কিনা সর্বোচ্চ ১,৪২৫ কিলোওয়াট শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। এটি তার নিজস্ব জ্বালানি সংরক্ষণ ট্যাংকে ২,২৩০ লিটার ফুয়েল ধারণ করতে পারে এবং যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ২,৭২১.৫৫ কেজি পর্যন্ত মালামাল (৬,০০০ পাউন্ড) কার্গো হুকের সাথে উল্লম্বভাবে পরিবহণ করতে পারে।


মূল অস্ত্র হিসেবে এই হেলিকপ্টারের ৪টি হার্ড পয়েন্টে লকহিড মার্টিন নির্মিত ৮টি এজিএম-১১৪ হেলফায়ার মিসাইলসহ বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে। এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফারের জন্য তিনটি এমকে-৫০ বা এমকে-৪৬ (অ্যাকটিভ/প্যাসিভ) লাইট ওয়েট টর্পেডো বহন করে। তাছাড়া নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য এটিতে একটি মাউন্টেড ৭.৬২ এমএম হেভি মেশিনগান সংযোজন করা হয়েছে। তবে এই নতুন চুক্তিতে আমেরিকা এবার ওয়ারহেড বিহীন হেলফায়ার-১১৪ আরএনএক্স’ শর্ট রেঞ্জের মিসাইল ভারতের কাছে দিতে যাচ্ছে।


এই হেলিকপ্টারটিতে লকহিড মার্টিনের তৈরি এএন/এএলকিউ-২১০ ইলেকট্রনিক সাপোর্ট ম্যাপিং সিস্টেম (ইএসএম) ইন্সটল করা হয়েছে। তার পাশাপাশি এটিতে উচ্চ প্রযুক্তির ইলেক্ট্রনিকস ওয়ারফেয়ার সিস্টেম হিসেবে এটিকে এএন/ এএআর-৪৭ মিসাইল ওয়ার্নিং সিস্টেম, লেজার ওয়ার্নিং সিস্টেম, বিএই সিস্টেম, এএন/ এএলকিউ-১৪৪ ইনফ্রারেড জ্যামার এবং এএন/এএলই-৩৯ (চাফ এবং ফ্লেয়ার ডিকয় ডিসপেনসার) সংযোজন করা হয়েছে।


তাছাড়া বিশেষ করে এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফায়ারের জন্য এটিতে স্নোবয় লাউঞ্চার এবং রেইথন এএন/একিউএস-২২ অ্যাডভান্স এয়ারব্রোন লো ফিকোয়েন্সী (এএলএফএস) ডিপ সোনার সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। এটিতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেইথন এএন/এএএস-৪৪ ডিটেক্টিং এন্ড ট্র্যাকিং সিস্টেম ইন্সটল করা হয়েছে। তবে ভারতের নৌবাহিনী তার নিজস্ব চাহিদা মাফিক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্স সিস্টেম, অত্যাধুনিক মিসাইল ও এভিয়নিক্স সিস্টেম কাস্টমাইজড করে নিয়েছে।


৩ থেকে ৪ জন ক্রু দ্বারা চালিত এই হেভি হেলিকপ্টারের দৈর্ঘ্য ১৯.৭১ মিটার এবং উচ্চতা ৫.২৩ মিটার। ৬,৮৯৫ কেজি ওজনের এই হেলিকপ্টারটি প্রতি ৮.৩৮ মিটার / সেকেন্ডে উপরে উড্ডয়ন করতে সক্ষম এবং এটির সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ২৬৭ কিলোমিটার এবং ক্রুজ গতি ১৬৮ কিলোমিটার/ঘণ্টা। এটির সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৮৩৪ কিলোমিটার এবং সার্ভিস সিলিং ৩,৪৩৮ মিটার। এর রেঞ্জ ৪৫০ কিলোমিটার এবং সার্ভিস সিলিং ৩,৭০০ মিটার।


বর্তমানে সারা বিশ্বে আমেরিকার নৌবাহিনীসহ মোট ১৫টি দেশের নৌবাহিনী বিভিন্ন সিরিজের এমএইচ-৬০ সী-হক মাল্টিরোল হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। আমেরিকার নৌবাহিনী বিশ্বের একক কোন দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫২৬টি এমএইচ-৬০ এইচএইচ/এমএইচ/এসএইচ সিরিজের সী-হক মেরিটাইম স্টাইক হেলিকপ্টার অপারেট করে। তাছাড়া আমেরিকার পাশাপাশি তুরস্ক ২৪টি, থাইল্যান্ড ৬টি, স্পেন ১৪টি, অস্ট্রেলিয়া ২৩টি, দক্ষিণ কোরিয়া ৮টি, জাপান ৩৭টি, তাইওয়ান ৯টি, ভারত ৬টি আরো (১৮টি অর্ডার বাকি আছে), সৌদি আরব ১০টি, গ্রিস ১১টি এমএইচ-৬০ ‘রোমিও’ সী-হক মেরিটাইম স্টাইক হেলিকপ্টার অপারেট করে।


লেখক: সিরাজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন