ভারতের ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ এবং কেরালাসহ একাধিক রাজ্যে এবারের বড়দিনের উৎসব উদযাপনে বাধার সৃষ্টি, হামলা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
সাজসজ্জা ভাঙচুর থেকে শুরু করে ক্যারল গানে অংশ নেওয়া শিশুদের ওপর হামলার মতো ঘটনায় অভিযোগের তীর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ও তাদের সহযোগী কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর দিকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটির খ্রিস্টান সম্প্রদায়।
ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের একটি শপিং মলে বড়দিনের সাজসজ্জা লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে একদল কট্টর হিন্দুত্ববাদী। মলের এক আতঙ্কিত কর্মচারী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে জানান, গত ১৬ বছরে তিনি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি। তিনি বলেন, প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জনের একটি দল জোর করে মলে ঢুকে পড়ে। তারা আমাদের হুমকি দেয়, চিৎকার করতে থাকে এবং ব্যাপক সহিংসতা চালায়।
এদিকে কেরালায় গত ২১শে ডিসেম্বর বড়দিনের ক্যারল গানে অংশ নেওয়া একদল শিশুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ‘দ্য নিউজ মিনিট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে আরএসএস-সংশ্লিষ্ট হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তি শিশুদের বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দেন। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনসহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন কেরালার বিজেপি নেতারা। দলটির রাজ্য নেতা সি কৃষ্ণকুমার এবং সহ-সভাপতি শন জর্জ আক্রান্ত শিশুদের ‘মদ্যপ অপরাধী চক্র’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিজেপি নেতাদের এমন মন্তব্যের জেরে ভুক্তভোগী শিশুদের পরিবার মানহানি ও মানসিক ক্ষতির অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশে এক বিজেপি জেলা সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে প্রার্থনাসভায় অংশ নেওয়া এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন শহরে বড়দিনের সামগ্রী বিক্রেতা হকারদের ভয়ভীতি দেখানো এবং হয়রানির খবর পাওয়া গেছে। দিল্লিতে বজরং দলের সদস্যরা সান্তা ক্লজের টুপি পরা নারী ও শিশুদের মৌখিকভাবে হেনস্তা করেছে বলে পুলিশের বক্তব্য ও ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে উঠে এসেছে। এছাড়া বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) প্রকাশ্যে হিন্দুদের বড়দিন উদযাপন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং একে ভারতীয় সংস্কৃতির জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এইসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তিনি আরএসএস-সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ডকে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, নাগরিকদের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না।
এছাড়া স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বড়দিনের অনুষ্ঠান বাতিলে আরএসএস চাপ দিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতের ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স (সিবিসিআই) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনায় নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষায় তারা সরকারের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
তথ্যসূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
ডিবিসি/এএমটি