বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ

ভোলায় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মায়ের মৃত্যু

ভোলা প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ভোলার বোরহানউদ্দিনে প্রতিবন্ধী ছেলেকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর মা জেসমিন বেগমের (৩৬) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি মা-সন্তানের প্রতি ভালোবাসার আত্মত্যাগ হিসেবে দেখানো হলেও, এটিকে এখন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছে জেসমিনের পরিবার, যা ঘটনাকে নতুন দিকে মোড় দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়নের রিভার ইকোপার্ক সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদী থেকে নৌ-পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।

 

গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একই ইউনিয়নের সাকের ভিটা এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীতে পড়ে যায় জেসমিনের প্রতিবন্ধী ছেলে তানজিল। ছেলেকে বাঁচাতে মুহূর্তেই নদীতে ঝাঁপ দেন মা জেসমিন। পরে স্থানীয়রা তানজিলকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও স্রোতের টানে হারিয়ে যান মা। তিন দিনের তল্লাশির পর মঙ্গলবার তার নিথর দেহ ভেসে ওঠে।

 

তবে এই ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা মানতে নারাজ জেসমিনের স্বজনরা। তারা অভিযোগ তুলেছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাদের দাবি, জেসমিনের স্বামী জসিম প্রায়ই তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন এবং এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হয়েছে। এক পর্যায়ে জসিম ঢাকায় গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে বসবাস শুরু করেন। এদিকে দুই প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন জেসমিন, যেখানে যৌতুকের জন্য তাকে নির্যাতন করা হতো বলেও অভিযোগ পরিবারের।

 

নিহতের স্বজনরা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘জেসমিন সাঁতার জানতো। সে কীভাবে পানিতে ডুবে মারা যায়, অথচ তার সাঁতার না জানা প্রতিবন্ধী ছেলেটি বেঁচে গেলো? এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়।’ তারা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

 

অন্যদিকে, এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন নিহত জেসমিনের স্বামী জসিম ও তার পরিবার। তারা বলেন, ‘ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড হলে আমরা গত কয়েকদিন ধরে তাকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতাম না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।’

 

এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিনের মির্জাকালু নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মজিবর রহমান মল্লিক জানান, স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনই এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই মৃত্যুকে ঘিরে জেসমিনের পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

 

ডিবিসি/পিআরএএন

আরও পড়ুন