বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ

ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে

ভোলা প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ১লা জুলাই ২০২৫ ০২:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধরের পর তার স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় সোমবার (৩০শে জুন) ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে তজুমদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঝর্ণা বেগম নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে। ঝর্ণা বেগম ভিক্টিমের স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী। গত রবিবার (২৯শে জুন) দুপুরে তজুমদ্দিন উপজেলার একটি ইউনিয়নে এই পাশবিক ঘটনা ঘটে।

 

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, তিনি ঢাকায় থাকেন এবং সম্প্রতি গ্রামের বাড়িতে আসেন। শনিবার রাতে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় গেলে সেখানে উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ৬-৭ জনের একটি দল ঘরে প্রবেশ করে। দ্বিতীয় স্ত্রী আর সংসার করবেন না- এই অজুহাতে তারা ভুক্তভোগীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।

 

তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ত্রাসীরা তাকে রড ও হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে অন্য একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন চালায়। খবর পেয়ে রবিবার সকালে তার প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে তিনি হামলাকারীদের হাতে-পায়ে ধরেন। তখন হামলাকারীরা চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করে।

 

ভুক্তভোগী নারী জানান, তিনি টাকা আনার জন্য শ্বশুরকে ফোন করার পর হামলাকারীরা তার স্বামীকে চা খাওয়ানোর কথা বলে বাইরে নিয়ে যায়। এরপর ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে ৭-৮ জন মিলে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। ভুক্তভোগী দম্পতি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনাটি কাউকে না বলার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তাদের ক্রমাগত হুমকি দিয়ে আসছিল। এক পর্যায়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ওই নারী আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। পরে কোনো উপায় না দেখে তার স্বামী জরুরি হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান।

 

খবর পেয়ে সোমবার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের অভিযোগ গ্রহণ করে। পরে সোমবার রাতেই ভুক্তভোগী নারীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করে তাকে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।

 

তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহব্বত খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে ৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঝর্ণা বেগম নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন, যুবদল কর্মী আলাউদ্দিনসহ বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে এবং ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।

 

ডিবিসি/এএনটি

আরও পড়ুন