আজ (৮ জুলাই) নাসরিন লঞ্চ দুর্ঘটনার ২০ বছর অতিবাহিত হলো। ২০০৩ সালের ৮ জুলাই ঢাকা থেকে লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ চাঁদপুরের ডাকাতিয়া এলাকায় অতিরিক্ত যাত্রী ও মালবোঝাই করার কারণে পানির তোড়ে তলা ফেটে গেলে প্রায় ২ হাজারের বেশি যাত্রীসহ লঞ্চটি ডুবে যায় মেঘনা নদীতে। ওই দিন প্রায় ৮ শতাধিক মানুষের সলিল সমাধি ঘটে।
দিনটি ভোলাবাসীর জন্য এক শোকাবহ দিন। ১৯৭০ এর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের পর ভোলাবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় ভয়াবহ সংবাদ ছিল নাসরিন লঞ্চ ট্রাজেডির ঘটনা। অনেকে তার প্রিয়জনদের হারিয়েছেন এই দিনে। আর এর মধ্য দিয়েই ঘটে যায় লঞ্চ দুর্ঘটনার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটিও। এ সময় জীবিত মৃত সব মিলিয়ে ৪০০ যাত্রীর সন্ধান মিললেও প্রায় ৮০০ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। দুর্ঘটনার দুইদিন পর থেকে ভোলার মেঘনা পরিণত হয়েছিল লাশের নদীতে। সেই ভয়ংকর দৃশ্য মনে করে এখনও শিউরে উঠে ভোলার মানুষ।
সেদিনের দুর্ঘটনায় এক পরিবারের ২৬ জন নিয়ে বরযাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠে ২৪ জনকেই হারান লালমোহন ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের মহেশখালী গ্রামের রিনা বেগম। রিনার সঙ্গে বেঁচে আসেন তার ফুফাতো ভাই সোহেল। কিন্তু চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলেন রিনার ৭ বছরের মেয়ে হাফসা, বোন স্বপ্না, রমা, তাদের স্বামী-সন্তান, মামা আবদুল কাদের, মামি সুফিয়া, খালা রাহিমা, খালাতো ভাই মিলন, মিজানসহ পুরো পরিবারের স্বজনরা। সেদিন রিনা ঢাকা থেকে ভাগ্নে কলেজ শিক্ষক মতিনের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য লালমোহনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। পরিবারের কোনো সদস্যেরই মরদেহ খুঁজে পাননি রিনা। এখনও স্বজনদের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে আছেন তিনি।
নাসরিন লঞ্চে সেদিন এশার নামাজের ইমামতি করেছিলেন লালমোহন চরভূতা ইউনিয়নের মাদ্রাসা সুপার মাও: মাকসুদুর রহমান। নিজে বেঁচে আসতে পারলেও সঙ্গে থাকা ভাগ্নে নোমানকে আর খুঁজে পাননি।
শুধু রিনা আর মাকসুদ নয়, এমন অনেক পরিবার আছে সেদিনের দুর্ঘটনায় একমাত্র উপার্জনকারী স্বজন হারিয়ে দিন কাটছে নানা সমস্যার মধ্যে।
এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও ভোলা-লালমোহন রুটে ফিটনেস বিহীন লঞ্চ ও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে ২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর আবারও দুর্ঘটনায় পড়ে এ রুটে চলাচলকারী কোকো-৪ লঞ্চ। সেই দুর্ঘটনায় ৮১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে নাসরিন ট্রাজেডি উপলক্ষ্যে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিবছর লালমোহনের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ডিবিসি/আরপিকে