লাইফস্টাইল, স্বাস্থ্য

মস্তিস্কের ভয়াবহ ক্ষতি করছে যেসব অভ্যাস

ডেস্ক রিপোর্ট

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ৫ই মার্চ ২০২৪ ০৩:৪৬:৫৭ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

মানবদেহের খুবই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ক ১০০ বিলিয়ন কোষ দিয়ে তৈরি। মস্তিষ্ক যতই ব্যবহৃত হয়, ততই শক্তিশালী আর কার্যকর হয়। বয়স ৪০-এর পর মস্তিষ্ক ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকে। তাই এ সময় পড়াশোনার ধার কমে আসে। বয়স ৬০-এর পর মস্তিষ্ক দ্রুত সংকুচিত হতে থাকে। তাই এ সময় অনেক স্মৃতি হারিয়ে যায়। অনেকে ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) ও আলঝেইমার রোগে ভোগেন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা জেনে না-জেনে এমন সব কাজ করি, যেগুলো আমাদের মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে।

এমন অনেকেই আছেন যাদের এখন আর বাইরে যেতে ভালো লাগে না। নিজের অন্ধকার ঘরে শুয়ে বসে থেকে কিংবা হেডফোনে জোরে গান শুনে সময় কাটাতে ভালো লাগে।

কিন্তু এভাবে আপনি যে আপনার ব্রেনের কত ভয়াবহ ক্ষতি করছেন সেটা কী জানেন?  শরীরের যেকোনো অংশে আঘাত বা স্পর্শ সবার আগে অনুধাবন করে মস্তিষ্ক। একই সঙ্গে কথা বলা বা চিন্তা করা থেকে শুরু করে শরীরের যেকোনো অংশের কাজের ক্ষেত্রে সবার আগে যে অংশ কাজ করে, সেটি হচ্ছে মস্তিষ্ক।


যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোলজিক্যাল ডিজঅডার্স অ্যান্ড স্ট্রোকসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ ব্যাপারে সকল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার তাহলে মস্তিস্কের ক্ষতি করে এমন কয়েকটি কাজ ও অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-

অতিরিক্ত অন্ধকারে থাকা

অতিরিক্ত অন্ধকারে থাকার অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। আমাদের ভেতর বিষণ্নতার সৃষ্টি করে। এ বিষণ্নতা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা মন্থর করে। এ কারণেই শীতপ্রধান দেশে আত্মহত্যার হার বেশি। প্রাকৃতিক আলোতে থাকলে আমাদের মস্তিষ্ক ভালোভাবে কাজ করে।

সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া

সারারাত না খেয়ে থাকার পর, দিনে কাজ করার শক্তি আসে সকালের নাস্তা থেকে। কিন্তু আমরা অনেকেই সকালে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নাস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এড়িয়ে যাই। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় যার প্রভাব গিয়ে পড়ে মস্তিষ্কে। দিনের পর দিন নাস্তা না খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষয় হতে থাকে, কোষগুলো কার্যকারিতা হারায়। এতে পুষ্টির অভাবে স্বাভাবিক কাজগুলো করা কঠিন হয়ে যায়।

অতিরিক্ত নেতিবাচক খবর দেখা, পড়া

অতিরিক্ত নেতিবাচক খবর দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব নেতিবাচক খবর মনের ওপর প্রভাব ফেলে। আর সেটা একসময় শরীর আর মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে।

উচ্চশব্দে গান শোনা বা শব্দদূষণে থাকা

ফুল ভলিউমে গান শোনা মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। টানা ৩০ মিনিট অতি উচ্চমাত্রার শব্দে থাকলে একজনের শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণরূপে লোপ পেতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও লোপ পেতে পারে। সেই সঙ্গে ব্রেনের টিস্যু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হেডফোনে উচ্চশব্দে গান শোনে, এমন ব্যক্তিদের আশপাশে কী ঘটছে বা যেকোনো কিছু বোঝার জন্য অন্যদের চেয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়।

অতিরিক্ত একা থাকা

মানুষ সামাজিক জীব- এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য। দলবদ্ধভাবে থাকার বিষয়টি মানুষের ডিএনএতে নির্দেশ দেওয়া। ফেসবুকে বন্ধুসংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার থেকে দু-একটি ভালো বন্ধু থাকা খুবই জরুরি। যারা কাছের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন, তারা অন্যদের তুলনায় হাসিখুশি ও কর্মদক্ষ হন। আলঝেইমারের ঝুঁকিও কম থাকে।

বেশি বেশি স্ক্রিন টাইম

অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইম’ও নানাদিক থেকে মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। টেলিভিশনের দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকা, ল্যাপটপে গেম খেলা বা ফেসবুকে অতিরিক্ত সময় কাটানো অথবা নেটফ্লিক্স ছেড়ে উঠতে না পারা- এসবই মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ। এ ছাড়া আপনি অতিরিক্ত পর্দায় চোখ আটকে সময় কাটাচ্ছেন মানে হলো আপনি কথা কম বলছেন। অতিরিক্ত কম কথা বলাও মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর।

পর্যাপ্ত পানি পান না করা

মানবদেহের মস্তিষ্কের ৭৫ শতাংশই পানি। এ জন্য মস্তিষ্কের ভালো কাজের জন্য একে আদ্র রাখা অনেক বেশি প্রয়োজন। পানির অভাবে মস্তিস্কের টিস্যু সংকুচিত হওয়া ও কোষগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এতে যৌক্তিক যুক্তিসংগত চিন্তা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো ক্ষমতা দিন দিন কমে যেতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করা উচিত। তবে স্বাস্থ্য, বয়স, লাইফস্টাইল ও আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এর পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

শরীরচর্চার অভাব

নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে ডিমেনশিয়ার আশঙ্কা বাড়ে। শুধু মস্তিষ্কের রোগই নয়, এর ফলে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। আর এগুলো সবই আলঝেইমারের সঙ্গে সম্পর্কিত।

অপর্যাপ্ত ঘুম

অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিমিয়ার নিউরোলজি অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার এ তথ্য জানিয়েছে। আরও জানানো হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমকে পর্যাপ্ত ঘুম বোঝানো হয়। এ জন্য রাতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম বেশি কার্যকর। ঘুমানোর সময় মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয়। পাশাপাশি বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে এবং নতুন করে কোষ তৈরি করে। তবে ৭ ঘণ্টার কম যদি ঘুম হয়, তাহলে নতুন কোষ গঠন হয় না।

ডিবিসি/ এসএসএস

আরও পড়ুন