দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইট-পাথরের ভবন আর লোহার গ্রিলের ভেতর যেন মৃত্যুকে জড়িয়ে ধরেই স্বপ্ন বুনছে লাখ লাখ কোমলপ্রাণ শিশু। শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে পুরো স্কুল ভবন লোহার গ্রিলে বন্দি থাকায় যেকোনো দুর্ঘটনায় শিশুদের উদ্ধারের পথ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে বহু শিশুর চোখের সামনে পুড়ে অঙ্গার হওয়ার পেছনেও এই কারণটিকেই দায়ী করা হচ্ছে, যা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজধানীর বড় মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র ভয়াবহ। এখানে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর ওঠানামার জন্য রয়েছে একটিমাত্র সরু সিঁড়ি। প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার বেগম জানান, শ্রেণিকক্ষগুলোর পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। জানালাগুলো লোহার গ্রিলে আটকানো এবং জরুরি বহির্গমনের কোনো সুযোগ নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে বের হওয়ার একমাত্র পথটি বন্ধ হয়ে গেলে করুণ পরিণতি হতে পারে সবার। একই এলাকার শাহনূরী মডেল হাইস্কুলের অবস্থাও তথৈবচ। প্রধান শিক্ষক কাজী গিয়াস উদ্দিনের প্রতিষ্ঠানে দেয়াল ছাড়া বাকি সব অংশ লোহার গ্রিলে ঘেরা, যা দেখে কারাগার বলে ভ্রম হয়।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল মান্নান বলেন, "শ্রেণিকক্ষ ও স্কুল ভবন এভাবে লোহার গ্রিলে বন্দি রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।"
শিক্ষা গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুস সালাম মনে করেন, "শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এই উন্নয়ন অর্থহীন" তার মতে, শিক্ষাখাতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেয়ে শিশুদের জীবনের নিরাপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। অবহেলা বা অসচেতনতার কারণে বহু বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে ঝুঁকি তৈরি হয়ে আছে, তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যেন মাইলস্টোনের মতো ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি না হয়।
ডিবিসি/জেআরওয়াই