শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিজ্ঞানের ভাষায় এটি একটি প্রমাণিত সত্য যে, মানুষের ডিএনএ এবং ফলের দোকান থেকে কেনা একটি সাধারণ কলার ডিএনএ এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ মিল রয়েছে।
আমাদের শারীরিক গঠন, চিন্তাশক্তি বা আচরণের সাথে একটি কলার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও, জীনগত স্তরে এই অদ্ভুত মিল বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল হিউম্যান জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর তথ্যানুযায়ী, এই মিল থাকার প্রধান কারণ হলো পৃথিবীর প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীর কোষের মৌলিক কাজগুলো প্রায় একই রকম।
মানুষ এবং কলা উভয়েই ইউক্যারিওটিক বা প্রকৃত কোষী জীব। এর অর্থ হলো, আমাদের কোষের ভেতর নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য অঙ্গাণু রয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক কাজ, যেমন কোষ বিভাজন, ডিএনএ প্রতিলিপি তৈরি এবং কোষের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য যে জীনগুলো বা নির্দেশনা প্রয়োজন, তা মানুষ এবং কলা উভয়ের ক্ষেত্রেই অনেকটা একই।
বিষয়টিকে সহজভাবে উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে, একটি সাধারণ বাড়ি এবং একটি বিশাল অট্টালিকার নকশা ভিন্ন হলেও, উভয়েরই ভিত্তি তৈরিতে ইট, বালি এবং সিমেন্টের মতো একই উপাদানের প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনি, মানুষ এবং কলার ডিএনএ-এর গাঠনিক উপাদান এবং মৌলিক ফাংশনাল জীনগুলো প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে একই রকম আচরণ করে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ডিএনএ এর এই মিল শুধু কলার সাথেই নয়, অন্য প্রাণীদের সাথে আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়। যেমন একজন মানুষের সাথে অন্য মানুষের ডিএনএ-এর মিল ৯৯.৯ শতাংশ, শিম্পাঞ্জির সাথে প্রায় ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশ এবং ইঁদুরের সাথে প্রায় ৮৫ শতাংশ। তবে উদ্ভিদের সাথে এই ৬০ শতাংশ মিল বিবর্তনেরই একটি অনন্য দিক। গবেষকরা জানান, বিলিয়ন বছর আগে আমাদের এবং উদ্ভিদের একজন সাধারণ পূর্বপুরুষ বা কমন অ্যানসেস্টর ছিল।
বিবর্তনের ধারায় মানুষ এবং উদ্ভিদ আলাদা হয়ে গেলেও, কোষের মৌলিক জীনগুলো আজও সেই আদি সম্পর্কের স্বাক্ষর বহন করছে। তাই ৬০ শতাংশ মিল থাকার অর্থ এই নয় যে মানুষ আসলে অর্ধেক কলা; বরং এর প্রকৃত অর্থ হলো মানুষের কোষীয় ক্রিয়াকলাপের ৬০ শতাংশ জীন কলার জীনগুলোর মতোই কাজ করে।
সূত্র: ফাইজার
ডিবিসি/এনএসএফ