বিবিধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মানুষের প্রথম চাঁদে পা রাখার ৫৬ বছর পূর্তি আজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ২০শে জুলাই ২০২৫ ০৩:২২:৪১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

আজ ২০শে জুলাই, বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক চাঁদ দিবস। মানব ইতিহাসের অন্যতম সেরা অর্জন চাঁদের বুকে মানুষের প্রথম পদার্পণকে স্মরণ করতে এই দিনটি পালন করা হয়।

১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অ্যাপোলো ১১ মিশনের নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পা রাখেন। এর কিছুক্ষণ পর তাকে অনুসরণ করেন বাজ অলড্রিন। আর্মস্ট্রংয়ের সেই বিখ্যাত উক্তি, "That's one small step for man, one giant leap for mankind" (এটি একজন মানুষের জন্য ছোট একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিশাল অগ্রযাত্রা) আজও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।

 

২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এক প্রস্তাবের মাধ্যমে (রেজোলিউশন ৭৬/৭৬) ২০শে জুলাইকে "আন্তর্জাতিক চাঁদ দিবস" হিসেবে ঘোষণা করে। মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং টেকসই চন্দ্রাভিযান সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই এই দিবসের মূল লক্ষ্য।

 

এই দিবসটি শুধুমাত্র অ্যাপোলো ১১ মিশনের সাফল্য স্মরণ করার জন্য নয়, বরং মহাকাশ গবেষণায় এখন পর্যন্ত সমস্ত দেশের অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি দিন। বর্তমানে আর্টেমিস (নাসা), চ্যাং'ই (চীন), ও চন্দ্রযান (ভারত) এর মতো বিভিন্ন দেশের চন্দ্রাভিযানগুলো আবারও চাঁদকে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এই দিবসটি টেকসই ও সহযোগিতামূলক মহাকাশ গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে।

 

চাঁদ জয়ের বিতর্ক:

 

চাঁদের বুকে মানুষের পদার্পণ মানব ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা হলেও, এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Conspiracy Theory) প্রচারিত হয়ে আসছে। এই তত্ত্বগুলোর মূল দাবি হলো, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা চাঁদে মানুষ পাঠানোর পুরো ঘটনাটিই সাজানো বা নকল, যা পৃথিবীতেই কোনো স্টুডিওতে চিত্রায়িত করা হয়েছিল।

 

মূলত স্নায়ুযুদ্ধের (Cold War) সময় মহাকাশ গবেষণায় সোভিয়েত ইউনিয়নকে টেক্কা দিতে এবং নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতেই আমেরিকা এই "নাটক" সাজিয়েছিল বলে দাবি করেন তাত্ত্বিকরা।

 

বিতর্ক ১: বাতাসে পতাকা ওড়া


ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: ছবিতে দেখা যায়, চাঁদের মাটিতে পুঁতে রাখা মার্কিন পতাকাটি যেন বাতাসে উড়ছে। যেহেতু চাঁদে বাতাস নেই, তাই এটি পৃথিবীতে ধারণ করা একটি দৃশ্যের প্রমাণ।

 

বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা: পতাকাটি সোজা রাখার জন্য এর ওপরে একটি অনুভূমিক রড (horizontal rod) লাগানো ছিল। নভোচারীরা যখন পতাকাটি মাটিতে স্থাপন করছিলেন, তখন রডটি পুরোপুরি প্রসারিত না হওয়ায় পতাকায় ভাঁজ বা ঢেউয়ের মতো একটি আকৃতি তৈরি হয়। বাতাসবিহীন পরিবেশে কোনো বস্তুকে নাড়া দিলে তার কম্পন অনেকক্ষণ স্থায়ী হয়। পতাকা পোঁতার সময় যে কম্পন তৈরি হয়েছিল, তাতেই এটিকে উড়ন্ত বলে মনে হচ্ছিল। এটি বাতাসের কারণে ঘটেনি।

 

বিতর্ক ২: ছবিতে তারা না থাকা

 

তত্ত্ব: চাঁদের পিঠ থেকে তোলা ছবিগুলোতে আকাশ সম্পূর্ণ কালো এবং একটিও তারা দেখা যায় না। এটি অস্বাভাবিক, কারণ বাতাসবিহীন চাঁদের আকাশ থেকে তারা আরও স্পষ্ট দেখার কথা।

 

বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা: এটি সাধারণ ফটোগ্রাফির একটি সূত্র। চাঁদের পৃষ্ঠ সূর্যের আলোতে অত্যন্ত উজ্জ্বল ছিল এবং নভোচারীদের সাদা পোশাকও ছিল আলোকোজ্জ্বল। এই উজ্জ্বল বস্তুগুলোর ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার শাটার স্পিড অনেক বাড়ানো ছিল এবং অ্যাপারচার (Aperture) রাখা হয়েছিল ছোট। এই সেটিংসে দূরের তারাগুলোর ক্ষীণ আলো ক্যামেরার সেন্সরে ধরা পড়েনি। এটি অনেকটা রাতের বেলায় শহরের উজ্জ্বল আলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা দেখতে না পাওয়ার মতো।

 

বিতর্ক ৩: ছায়ার রহস্য

 

তত্ত্ব: বিভিন্ন ছবিতে নভোচারী ও বস্তুগুলোর ছায়া ভিন্ন ভিন্ন কোণে পড়েছে। এটি প্রমাণ করে যে সেখানে সূর্যের মতো একটি মাত্র আলোর উৎস ছিল না, বরং স্টুডিওর মতো একাধিক লাইট ব্যবহার করা হয়েছিল।

 

বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা: চাঁদের পৃষ্ঠ সমতল নয়; এটি উঁচু-নিচু গর্ত, টিলা এবং পাথরে পরিপূর্ণ। এই অসমতল ভূমির কারণে একটি মাত্র উৎস (সূর্য) থেকে আসা আলোতেও ছায়াগুলো বেঁকে গিয়ে বিভিন্ন কোণে পড়েছে বলে মনে হয়। দৃষ্টিভঙ্গির (Perspective) কারণেও ছায়াগুলোকে ভিন্ন দৈর্ঘ্যের ও ভিন্ন কোণের বলে ভ্রম হয়।

 

বিতর্ক ৪: ল্যান্ডারের নিচে গর্তের অনুপস্থিতি


ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: লুনার মডিউল (যান) যখন চাঁদে অবতরণ করে, তখন এর শক্তিশালী রকেটের ধাক্কায় মাটিতে একটি বড় গর্ত তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু ছবিতে তেমন কোনো গর্ত দেখা যায় না।

 

বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা: অবতরণের ঠিক আগমুহূর্তে ইঞ্জিনের শক্তি অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, বায়ুমণ্ডল না থাকায় রকেটের গ্যাস চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, পৃথিবীর মতো ঘনীভূত ধাক্কা তৈরি করে না। এর ফলে শুধুমাত্র উপরের আলগা ধুলোবালি উড়ে গিয়েছিল, কিন্তু নিচের শক্ত মাটির স্তরে বড় গর্ত তৈরি হয়নি।

 

ডিবিসি/এমইউএ

আরও পড়ুন