স্মার্টফোনের ১২৮ বা ২৫৬ জিবি মেমোরি পূর্ণ হয়ে গেলেই আমরা চিন্তায় পড়ে যাই, ফোন ধীরগতির হয়ে যায়। অথচ আপনি জানলে অবাক হবেন, খোদ আপনার মাথার ভেতরেই যে ‘সুপার কম্পিউটার’ বা মস্তিষ্ক রয়েছে, তার ধারণক্ষমতা আধুনিক যেকোনো সাধারণ কম্পিউটারের চেয়ে বহুগুণ বেশি। বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মানুষের মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণক্ষমতা প্রায় ২৫ লক্ষ গিগাবাইট বা ২.৫ পেটাবাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সল্ক ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল স্টাডিজ’-এর স্নায়ুবিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর এই চমকপ্রদ তথ্যটি সামনে এনেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। কিন্তু সল্ক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক টেরি সেজনোস্কি এবং তার গবেষক দল মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশের নিউরন এবং সিন্যাপস বা স্নায়ু সংযোগ নিয়ে বিশদ গবেষণা করেন। তারা দেখেন, সিন্যাপসগুলোর আকার ও ধরণ আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়।
একটি নিউরন আরেকটি নিউরনের সাথে সংযোগ স্থাপনের সময় ২৬টি ভিন্ন ভিন্ন আকারের সিন্যাপস তৈরি করতে পারে। এই জটিল গাণিতিক হিসাব থেকেই বেরিয়ে আসে যে, মস্তিষ্কের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা আসলে আমাদের আগের ধারণার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি।
এই বিশাল মেমোরিকে সহজে বোঝার জন্য গবেষকরা একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন। আপনার মস্তিষ্ক যদি একটি ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার বা ডিভিআর হতো, তবে ২৫ লক্ষ গিগাবাইট মেমোরিতে আপনি টানা ৩০০ বছর ধরে হাই-ডেফিনিশন মানের টিভি শো বা ভিডিও রেকর্ড করতে পারতেন, তবুও মেমোরি পূর্ণ হতো না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত বিশাল পরিমাণ তথ্য প্রসেস করতে মস্তিষ্কের খুব সামান্য শক্তির প্রয়োজন হয়।
গবেষকদের মতে, মস্তিষ্ক যখন পূর্ণোদ্যমে কাজ করে, তখন এটি মাত্র ২০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে, যা একটি সাধারণ ডিম লাইট জ্বালানোর শক্তির সমান।
অথচ এই ক্ষমতার একটি কৃত্রিম কম্পিউটার বানাতে গেলে হাজার হাজার গুণ বেশি শক্তির প্রয়োজন হতো। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মস্তিষ্কের এই অবিশ্বাস্য ডিজাইন ও কার্যক্ষমতা ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও সাশ্রয়ী কম্পিউটার তৈরিতে প্রকৌশলীদের নতুন পথ দেখাবে।
সূত্র: সিএনএস
ডিবিসি/এনএসএফ