আপনি জানেন কি?

মানুষ অন্ধকারে আলো ছড়ায়, কিন্তু আমরা তা দেখতে পাই না

ডেস্ক নিউজ

ডিবিসি নিউজ

৩৯ মিনিট আগে
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

মানুষের শরীর কি আলো ছড়াতে পারে? প্রশ্নটি করা হলে অধিকাংশ মানুষই হয়তো উত্তর দিত 'না, মানুষ তো আর জোনাকি পোকা বা জেলিফিশ নয়।' কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের সেই ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। জাপানি বিজ্ঞানীদের একটি যুগান্তকারী গবেষণা প্রমাণ করেছে, প্রতিটি জীবিত মানুষের শরীর থেকে প্রতিনিয়ত আলো বা ফোটন কণা নির্গত হচ্ছে। রূপক অর্থে নয়, বরং আক্ষরিক অর্থেই মানুষ 'জ্বলজ্বল' করছে।

বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল প্লোস ওয়ান-এ প্রকাশিত এই গবেষণাটি বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। 

 

২০০৯ সালে জাপানের সেনদাই শহরের তোহোকু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষক মাসাকি কোবায়াশি এবং তাঁর দল একটি অদ্ভুত পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। তারা জানতে চেয়েছিলেন, প্রাণীদের মতো মানুষের শরীরেও 'বায়োলুমিনেসেন্স' বা জৈব-দ্যুতি আছে কিনা।

 

এই পরীক্ষার জন্য তারা অত্যন্ত শক্তিশালী ও সংবেদনশীল একধরণের ক্যামেরা ব্যবহার করেন, যার নাম ক্রায়োজেনিক চার্জ-কাপলড ডিভাইস। এই ক্যামেরা এতটাই শক্তিশালী যে এটি একক ফোটন কণা শনাক্ত করতে সক্ষম।

 

গবেষণায় অংশ নেওয়া ৫ জন সুস্থ ও সবল পুরুষ স্বেচ্ছাসেবককে সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন ও আলোক-নিরোধক ঘরে রাখা হয়। টানা কয়েক দিন ধরে প্রতি ৩ ঘণ্টা অন্তর তাদের শরীরের ছবি তোলা হয়। এবং ফলাফল যা আসে, তা বিজ্ঞানীদেরও অবাক করে দেয়। ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ে, অন্ধকারে বসে থাকা মানুষগুলোর শরীর থেকে মৃদু সবুজ ও লালচে আভা বা আলো বেরিয়ে আসছে!

 

প্রশ্ন জাগতে পারে, শরীর থেকে আলো বের হলে আমরা কেন একে অপরকে অন্ধকারে জ্বলতে দেখি না? এর উত্তর হলো আমাদের চোখের সীমাবদ্ধতা। মানুষের শরীর থেকে নির্গত এই আলোর তীব্রতা অত্যন্ত ক্ষীণ। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, আমাদের খালি চোখ যতটা আলো দেখতে সক্ষম, শরীর থেকে বের হওয়া এই আলো তার চেয়ে ১০০০ গুণ দুর্বল। তাই বিশেষ ক্যামেরা ছাড়া এই দৃশ্য দেখা অসম্ভব।

 

কখন এবং কোথায় জ্বলে শরীর?


গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, মানুষের এই ‘জ্বলে ওঠা’র বিষয়টি এলোমেলো নয়, বরং এটি ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে। দিনের শুরুতে অর্থাৎ সকাল ১০টার দিকে শরীর থেকে সবচেয়ে কম আলো বের হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই দ্যুতি বাড়তে থাকে এবং বিকেল ৪টার দিকে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এরপর সন্ধ্যার পর থেকে আবার তা কমতে শুরু করে। এটি প্রমাণ করে, এই আলোর সাথে আমাদের শরীরের 'বায়োলজিক্যাল ক্লক' বা দেহঘড়ির নিবিড় সম্পর্ক আছে।

 

শরীরের সব অংশ সমানভাবে আলো দেয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মুখমণ্ডল বিশেষ করে কপাল, গাল এবং ঘাড়ের অংশ বাকি শরীরের তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল। গবেষকদের মতে, শরীরের এই অংশগুলো সূর্যের আলোর সংস্পর্শে বেশি থাকে, সম্ভবত তাই এখানকার মেলানিন রঞ্জক বা কোষীয় কার্যক্রম বেশি সক্রিয়।

 

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কেন জ্বলে মানুষ?


মানুষের শরীর কেন আলো দেয়, তার একটি চমৎকার রাসায়নিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি কোনো জাদুকরী ঘটনা নয়, বরং এটি আমাদের বেঁচে থাকারই লক্ষণ।

 

আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত খাবার হজম ও শক্তি উৎপাদনের কাজ চলে। এই প্রক্রিয়ায় কোষের ভেতরে নানারকম রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। শক্তি উৎপাদনের সময় উপজাত হিসেবে 'ফ্রি র‍্যাডিক্যাল' (বিশেষ করে সুপারঅক্সাইড ও নাইট্রিক অক্সাইড) তৈরি হয়।

 

এই অস্থিতিশীল ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলো যখন আমাদের কোষের চর্বি বা প্রোটিনের সাথে বিক্রিয়া করে, তখন শক্তির আদান-প্রদান ঘটে এবং ফোটন কণা বা আলো নির্গত হয়।

 

সহজ কথায়, একটি গাড়ি চললে যেমন ইঞ্জিন গরম হয়, তেমনি আমাদের শরীর চললে আলো তৈরি হয়। এটি প্রমাণ করে যে আমাদের বিপাক ক্রিয়া ঠিকঠাক কাজ করছে।

 

তথসূত্র দ্য গার্ডিয়ান

 

ডিবিসি/এমইউএ

আরও পড়ুন