চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে আয়ু বাড়ানো গেলেও, মানুষ কী আদৌ অমরত্ব লাভ করতে পারবে?
মানুষ মাত্রই মরণশীল। এটা খুব একটা খুশির কথা নয়, তবে বেঁচে থাকার যথার্থতা হচ্ছে মৃত্যু। যদিও মানুষ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে নিজের জীবনের ব্যাপ্তি দীর্ঘায়িত করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে জীবনের এই দীর্ঘায়ু বাড়ানো গেলেও, মানুষ কী আদৌ অমরত্ব লাভ করতে পারবে? এটা নির্ভর করছে, আপনি অমরত্ব বলতে কি বুঝেন তার ওপর।
ফ্লোরিডা আটলান্টিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ফিউচার মাইন্ডের দার্শনিক এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সুজান স্নেইডার বলেন, মানুষ তার মস্তিষ্ক এবং শরীরকে সংরক্ষণ করতে পারলেও মহাবিশ্ব বিলীন হওয়া পর্যন্ত তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, মহাবিশ্ব একসময় বিলীন হয়ে যাবে এবং এটাই মানুষের সম্ভাব্য অমরত্ব লাভের প্রধান অন্তরায়। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড বিলীন হলেও মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দেখছেন।
বিজ্ঞান বিষয়ক সাংবাদিক জন হোরগান সায়েন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকায় লিখেছেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষ বুড়ো হয়ে যায় এবং একসময় তার মৃত্যু ঘটে। বেঁচে থাকতে হলে আমাদের শরীরের বুড়ো হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া থামাতে হবে। কিছু প্রাণীর মধ্যে এই প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। তাই এটা খুব দূরে না যখন মানুষের মধ্যেও এই ক্ষমতা তৈরি হতে পারে।
হায়ড্রা একধরনের ছোট জেলিফিশ জাতীয় অমেরুদন্ডী প্রাণী। যারা নিজেদের বুড়িয়ে যাওয়া প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এদের শরীরের স্টেম সেলস বার বুড়িয়ে যাওয়া কোষগুলো ঝেড়ে ফেলে নতুন কোষ তৈরি করতে সক্ষম। এই প্রক্রিয়ায় তারা তারুণ্য ধরে রাখে এবং দীর্ঘদিন বাঁচে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ক্ল্যারমোন্টের পোমোনা কলেজের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ডানিয়েল মার্টিনেজ বলেন, হায়ড্রা যেহেতু নিজেদের চির তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম তাই তারা অমর। কিন্তু এটা হায়ড্রার ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও মানুষের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। কারণ হায়ড্রা হলো ১০ মিলিমিটার দৈর্ঘের একটি কীট যার কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই। কিন্তু, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে এবং মানুষ খুব জটিল প্রাণী, বলেন মার্টিনেজ।
মানুষের শরীরেও পুরনো কোষ ঝড়ে পড়ে নতুন কোষ তৈরি হয়। যেমন লিভার। হায়ড্রা সব কোষ পুনর্গঠন করতে পারে। মানুষের শরীরে পুরনো কোষ পুনর্গঠনের জন্য নতুন কোষের প্রয়োজন পড়ে। যেমন-আমাদের শরীরের শ্বেত রক্তকণিকা অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহায়তা করে এবং এটা করতে তাকে অন্য কোষগুলো থেকে আলাদা হয়ে যেতে হয়। এই কোষগুলো কার্যক্ষমতা কমে গেলে আমরা বুড়িয়ে যেতে থাকি।
আমরা অপ্রয়োজনীয় কোষগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে পারি না, যা হায়ড্রা করতে পারে। যেমন আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন তথ্য আদান-প্রদানে সহায়তা করে। আমরা যদি এই কোষগুলো ঝেড়ে ফেলতে চাই তাহলে আমরা সবকিছু ভুলে যাব। আমরা এগুলো অন্য কিছু দিয়ে পরিবর্তন করতে চাই না। বরং মানুষের সুস্থ থাকার বিষয়ে হায়ড্রাকে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। যেমন-যে প্রক্রিয়ায় তারা নিজেদের তারুণ্য ধরে রাখে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ কখনই জীবতাত্ত্বিকভাবে অমরত্ব লাভ করতে পারবে না।
মার্টিনেস ব্যক্তিগতভাবেও জৈবিক অমরত্বের বিরোধী। তিনি মনে করেন, মানুষ একপ্রকার অমরত্ব লাভ করেছে। যেমন-একজন কবি তার লেখনির মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করে আছে। তার লেখনি তাকে মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রেখেছে। এবং মানুষ এভাবেই চিরদিন বেঁচে থাকবে।