মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক বাণিজ্য শুল্ক আরোপের হুমকির মুখেও নিজেদের তেল আমদানি নীতি স্পষ্ট করল ভারত। রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার জানিয়েছেন, দেশের ১.৪ বিলিয়ন মানুষের স্বার্থে ভারত সেখান থেকেই তেল কিনবে, যেখানে "সবচেয়ে ভালো চুক্তি" পাবে।
এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এলো যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০% শুল্ক কার্যকর হওয়ার পথে, যার মধ্যে রাশিয়ার তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ২৫% জরিমানাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রবিবার মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার ওপর "শক্তিশালী অর্থনৈতিক চাপ" প্রয়োগের জন্যই ট্রাম্প ভারতের ওপর এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এসকল তথ্য জানা যায়।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সস্তা রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়িয়েছে দিল্লি, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করেছে। ২০২১ সালে যেখানে ভারতের তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ৩%, সেখানে ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৩৫-৪০% হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, রাশিয়ার তেল কিনে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়ন করছে, যদিও দিল্লি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রবিবার রাশিয়ার TASS সংবাদ সংস্থাকে কুমার বলেন, ভারতের বাণিজ্য বাজার দ্বারা নির্ধারিত এবং দেশের জনগণের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। তিনি ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে "অন্যায়, অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য" বলেও জানান। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও রাশিয়ার তেল কেনার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক চীন বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর এমন শুল্ক আরোপ করেনি। জয়শঙ্কর ভারতের "কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের" ওপর জোর দিয়ে বুঝিয়ে দেন যে, মার্কিন চাপে তারা নতি স্বীকার করবে না।
ভারত ইউক্রেনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে, আবার রাশিয়া তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। দিল্লি বারবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের "সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের" আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু পশ্চিমা চাপের মুখেও রাশিয়াকে প্রকাশ্যে নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে।
রবিবার ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্ডার পোলিশচুক স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শীঘ্রই ভারত সফর করতে পারেন। অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনেরও এই বছর ভারত সফরের কথা রয়েছে।
ডিবিসি/এনএসএফ