মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রপ্তানি পণ্যের ওপর একতরফাভাবে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর ইউরোপীয় নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এই পদক্ষেপকে একটি বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আটলান্টিকের উভয় পারের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রধানমন্ত্রীরা একযোগে এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে ঐক্যবদ্ধভাবে এর মোকাবিলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ এক বিবৃতিতে বলেন, "ইইউর রপ্তানির ওপর ৩০% শুল্ক আরোপ করা হলে তা আটলান্টিকের উভয় পারের ব্যবসা, ভোক্তা এবং রোগীদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা ১ আগস্টের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য কাজ চালিয়ে যাব। তবে একই সাথে, আমরা আনুপাতিক পাল্টা ব্যবস্থার ভিত্তিতে ইইউর স্বার্থ রক্ষা করতেও প্রস্তুত।" তার এই বক্তব্যে আলোচনার দরজা খোলা রাখার পাশাপাশি কঠোর পাল্টা পদক্ষেপের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা এই পদক্ষেপের অর্থনৈতিক প্রভাব তুলে ধরে বলেন, "শুল্ক মানেই কর। এটি মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায়, অনিশ্চয়তা তৈরি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে।" তিনি প্রেসিডেন্ট ভন ডার লেনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, ইইউ ঐক্যবদ্ধ এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত।
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফ এই ঘোষণাকে "উদ্বেগজনক এবং কোনোভাবেই অগ্রগতির পথ নয়" বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন বলেছেন, "এই বর্ধিত বাণিজ্য সংঘাতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদেরই।" তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর জোর দেন।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এই পদক্ষেপকে "গভীরভাবে দুর্ভাগ্যজনক" বলে মন্তব্য করে বলেন, উত্তেজনা বৃদ্ধি সহায়ক নয়, আলোচনাই একমাত্র পথ। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইইউর সম্মিলিত শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, "ইউরোপীয়রা ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্লক গঠন করেছে। আসুন একটি ন্যায্য চুক্তি অর্জনের জন্য সেই শক্তি ব্যবহার করি।"
ইউরোপীয় নেতাদের এই সম্মিলিত ও কঠোর প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই একতরফা সিদ্ধান্তকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না। যদিও তারা আলোচনার পথ খোলা রেখেছে, তবে প্রয়োজন হলে একটি বাণিজ্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেও তারা প্রস্তুত, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
ডিবিসি/এমএআর