জেলার সংবাদ, অপরাধ

মায়ের পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে ছেলেকে হত্যা

রাকিবুল হাসান রুবেল, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ১৬ই অক্টোবর ২০২০ ০৩:০৫:৫০ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের মরিচারচর নামাপাড়া এলাকায় স্কুলছাত্র পারভেজ হত্যার রহস্য উৎঘাটন করেছে র‌্যাব ও পিবিআই।

ঘটনার সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে মূল পরিকল্পনাকারী পারভেজের মা'সহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে তারা। মায়ের পরকীয়া দেখে ফেলায় হত্যা করা হয় ছেলেকে। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিকালে, গ্রেপ্তারকৃত আসামি রবিকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্যাট আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় বলে জানায় পিবিআই।

র‌্যাব-১৪ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি জানান, ১১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের নামাপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে মালয়েশিয়া প্রবাসী মঞ্জুরুল হকের ছেলে পারভেজের (১৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন নিহত পারভেজের চাচা বাদি হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১৪ অপারেশন টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৪ অক্টোবর (বুধবার) রাতে ঈশ্বরগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি মরিচারচর পূর্বপাড়ার এমদাদুল হক (৩৮), নিহত পারভেজের মা রোজিনা আক্তার (৩০), মরিচারচার উত্তরপাড়ার আব্দুল গনি (৪৫), পূর্বপাড়ার সুলতান উদ্দিন (৪০) ও রুহুল আমিনকে (৫৮) গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাব উপ-অধিনায়ক আরো জানান, নিহত পারভেজের মা রোজিনা আক্তারের সঙ্গে এমদাদুল হকের দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো। সম্প্রতি তাদের অবৈধ সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ছেলে পারভেজ। ঘটনাটি রোজিনার প্রবাসী স্বামীর কাছে বলে দেয়ার ভয়ে পারভেজকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে মা রোজিনা। পরিকল্পনা মোতাবেক ১১ অক্টোবর রাতে অর্থের বিনিময়ে খুনি ভাড়া করে বাড়ি থেকে ফোনে ডেকে নিয়ে হত্যা করে পারভেজকে। পরে মরদেহ ফেলে দেয়া ব্রহ্মপুত্র নদে।

পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, পারভেজ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রবিউল ইসলাম রবি (১৮) নামে অপর এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহ। গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় পারভেজের ব্যবহৃত সিমসহ একটি স্মার্টফোন এবং তার মায়ের ব্যবহৃত সিমসহ একটি বাটন ফোন। মা রোজিনার পরকীয়া প্রেমের পথে বাধা হওয়ায় সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে পারভেজকে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পারভেজের বাবা মুঞ্জুরুল হক একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী। পাঁচ সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ীতে থাকে স্ত্রী রোজিনা। পারভেজ ছিলো তাদের বড় সন্তান। সে মরিচার চর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্র। পারভেজের বাবা দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় পারভেজের মা রোজিনা জড়িয়ে পড়েন একাধিক পরকীয়া প্রেমে। রোজিনা দিনে রাতে কথা বলতো তার প্রেমিকদের সঙ্গে। পারভেজ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নানাভাবে তার মাকে বাধা দিতো। তার মা যে নম্বরগুলোতে কথা বলতো পারভেজ কৌশলে সেই নম্বরগুলো ব্লক লিস্টে রেখে দিতো। আসামি রবিউলের বাড়ি পারভেজের বাড়ির কাছে হওয়ায়, পারভেজের মা রোজিনা তার ফোনের ব্লক করা নম্বরগুলো রবিউলের কাছ থেকে আনব্লক করে নিতো। রোজিনা ফোনে কথা বলার জন্য মোবাইলে টাকা রিচার্জ করে নিতো আসামি রবিউলের মাধ্যমে। পরে, পারভেজ মাকে ভয় দেখায় সব ঘটনা সে তার বাবাকে বলে দেবে। ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে পারভেজের মা। পরিকল্পনা করতে থাকে নিজ সন্তানকে হত্যা করে পথের কাঁটা দূর করার। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৯ অক্টোবর পারভেজের মা রোজিনা ফোন করে রবিউলকে জরুরি কথা আছে বলে টঙ্গী থেকে বাড়িতে আনে। তখন রোজিনা ছেলে পারভেজকে খুন করার প্রস্তাব দেয় রবিউলকে। বিনিময়ে অফার দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। লোভে পড়ে যায় রবিউল। অনেক চিন্তার পর রাজি হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে কিভাবে? তখন পারভেজের মা বলে তুমি নদীর পাড়ে গিয়ে অপেক্ষা কর, আমি পারভেজকে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তখন আসামি রবিউল নদীর পাড়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সে নদীর পাড়ে থাকা একটি গাছের মোটা ডাল তার কাছে রাখে। এদিকে রোজিনা তার ফোনটা পারভেজের হাতে দিয়ে বলে নদীর পাড়ে রবিউল আছে তুমি গিয়ে এই ফোনটা তাকে দিয়ে আস। পারভেজ তার সাইকেল নিয়ে নদীর পাড়ের উদ্দেশ্যে বের হয়। মায়ের কথায় পারভেজ নদীর কিনারায় পৌঁছে রবিউলকে দেখতে পায় এবং তার মায়ের দেয়া ফোনটা রবিউলকে দিয়ে দেয়। ফোন রবিউলের হাতে দিয়ে পারভেজ বাড়ির দিকে পা বাড়নোর সঙ্গে সঙ্গে রবিউল তার কাছে রাখা গাছের মোটা ডাল দিয়ে পারভেজের মাথায় স্বজোরে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। এসময় পারভেজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আসামি রবিউল পারভেজের স্মার্ট ফোন এবং পারভেজের মায়ের দেয়া বাটন ফোন ২টি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। রবিউল পারভেজের মা’র কাছে এসে হত্যার ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন পারভেজের মা তাকে বলে এখন তুমি যাও। পারভেজের বাবা বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে আমি তোমাকে ডেকে দিয়ে দিবো। এরপর আসামি রবিউল ওই রাতেই আবারো টঙ্গীতে ফিরে আত্মগোপন করে। পরদিন সকালে একই গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে পারভেজের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।


আরও পড়ুন