গেরিলা বাহিনী সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাহিনী ছিল এফ এফ বা ফ্রিডম ফাইটার।
প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে নানা বাহনীর পাশাপাশি দলগতভাবে ছোট ছোট দল গড়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অনেকেই। তারা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি বাহিনী ও এদেশীয় দালালদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল।
৭১ সালের ২৬শে মার্চের পর যে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে উঠেছিল এবং যারা সক্রিয় ছিলেন পরবর্তীকালে তারাসহ হাজার হাজার মুক্তিকামী যুবক প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা যোদ্ধা হয়েছিলেন। গেরিলা বাহিনী সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাহিনী ছিল এফ এফ বা ফ্রিডম ফাইটার।
ভারতীয় সেনা বাহিনীর মেজর জেনারেল ওবানের তত্ত্বাবধানে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি গঠন করেন বিএলএফ বা মুজিব বাহিনী। ছাত্রনেতা সিরাজুল ইসলাম খান, কাজী আরেফ আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আ. স. ম. আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, নুর-এ-আলম সিদ্দিকী ও আব্দুল কুদ্দুস মাখনের সমন্বয়ে প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য নিয়ে গড়ে ওঠে মুজিব বাহিনী। এ বাহিনীকে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং এর নেতৃত্বে ছিল ১৯-সদস্যের কেন্দ্রীয় কম্যান্ড।
শেখ মনি মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারত সরকার এ বাহিনীকে একটি সি-৪, একটি এন-১২ এবং একটি পুরাতন ডাকোটা বিমানসহ বেশ কিছু ট্রাক ও জীপ প্রদান করে। যৌথবাহিনীর সহায়তা ছাড়াই পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম দখল করেছিল এই বাহিনী।
"হিট এন্ড রান” পদ্ধতিতে ৮২টি দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীতে পাক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক ত্রাসের সঞ্চার করেছিল কয়েকজন সাহসী গেরিলা। রাজধানীবাসী তাদের তৎপরতায় খুশি হয়ে নাম দিয়েছিল বিচ্ছু বাহিনী।
এই ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম সদস্য ছিলেন শহীদ শফি ইমাম রুমী, শহীদ মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ, শহীদ বদিউল আলম বদি, শহীদ আবদুল হালিম চৌধুরী, শহীদ মোহাম্মদ আবু বকর, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরি মায়া, আজম খান, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, লিনু বিল্লাহ, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাদেক হোসেন খোকা, বিচ্ছু জালালসহ অনেকেই।
পাক বাহিনী তাদের ১৫ জনকে ধরে টর্চার সেলে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করে। পরবর্তীতে এই সাহসী গেরিলাদের মাঝে নয়জনের আর কোন খোঁজ মেলেনি।
কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের নেতৃত্বে আরো একটি বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। যার নাম ছিল ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনী। বিশেষ গেরিলা বাহিনী এজন্য বলা হতো যে এ বাহিনীকে দীর্ঘস্থায়ী গেরিলা যুদ্ধের উপযোগী করে প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল। বাহিনীর নেতৃত্বকে একটা মাত্রা পর্যন্ত কমান্ডো ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল। প্রবাসী সরকারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ শুধু এ বাহিনী সম্পর্কে জানতেন। বিভিন্ন নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি এসব অনিয়মিত বাহিনীও বিরাট অবদান রাখে মুক্তিযুদ্ধে। যাদের রয়েছে আত্মত্যাগের অজস্র করুণগাঁথা।