স্বাধীনতাকামী কোটি কোটি নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর উপর পাকিস্তানি সেনাদের অতর্কিত হামলায় সমব্যথিত হয়ে কেঁদেছিলেন অনেক ভিনদেশি।
পাকিস্তানিদের অন্যায়ে মৌন থাকেন নি, অনেকেই অস্ত্র তুলে নেন। কেউ বিশ্বরাজনীতির মাঠে প্রতিবাদ তুলে, কেউ কবিতা, কেউ বা গানে- এমনও হয়েছে ভিক্ষা করে অর্থের যোগান করেছেন। বাংলার স্বাধীনতার সাথে তাদের নাম রৌদ্রাক্ষরে লেখা আছে। আজ থাকছে মুক্তি সংগ্রামের সহযোদ্ধা সেই সব অকৃত্রিম বিদেশি বন্ধুদের কথা।
বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধে বেইমানদের তালিকায় ছিল এদেশেরই কিছু নিকৃষ্ট মানুষ। যারা নির্যাতন-নিপীড়ন করেছিল পাকজান্তাদের ছত্রছায়ায়। কিন্তু পাশাপাশি বাঙালীর বুকফাটা কান্নায় কেঁদেছিল অনেক বর্হিবিশ্বের অনেক নাগরিক।
ওডারল্যান্ড একজন ডাচ বংশদ্ভুত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। ১৯৭০ সালে টংগীতে অবস্থিত বাটা সু ফ্যক্টরীতে প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। পাকিস্তানিদের গণহত্যা ভয়াবহতার কিছু ছবি গোপনে পাঠান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
আগস্ট মাসের দিকে তিনি টঙ্গীতে বাটা কোম্পানির ভিতরে গেরিলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। টঙ্গী ও এর আশপাশ এলাকায় বেশ কয়েকটি সফল গেরিলা হামলা চালান। মুক্তিযুদ্ধে এ বীরোচিত ভূমিকার জন্য বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন তিনি।
সিডনি শ্যানবার্গ ছিলেন দি নিউইয়র্ক টাইমস এর একজন সাংবাদিক। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের হত্যাকান্ড তিনি খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেন। সে সময় তিনি ছিলেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। হোটেলের জানালা দিয়ে তিনি দেখেন ইতিহাসের এক ভয়ানক হত্যাকান্ড। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর অসংখ্য খন্ড খন্ড প্রতিবেদন পাঠান, পুরো বিশ্ব জানতে পারে পাক বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ।
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। বিশ্বমন্ডলে স্বাধীনতাকামী বাঙালীর সংকটের কথা পৌঁছে যায়। কনসার্টের মূল পরিকল্পনা করেন বিখ্যাত ভারতীয় সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশঙ্কর। ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের সেই কনসার্টের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন জর্জ হ্যারিসন। হ্যারিসনের আমন্ত্রণে গান পরিবেশন করেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেলসহ আরো কয়েকজন নামাদামি শিল্পী।
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগের কানাডিয় অধ্যাপক জোসেফ টি ও’কনেল বাংলা চর্চা করেন। জোসেফ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে জনমত গড়ে তুলেন।
মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের অনবদ্য সৃষ্টি-বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ওপর কবিতা সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড। নিপীড়িত মানুষের হাহাকার, যুদ্ধের বাস্তবচিত্র তুলে ধরা কবিতাপড়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন হাজারও মানুষ। বাংলাদেশের পক্ষে একাত্ম হয়ে ওঠেন বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অগণিত সাহিত্যপ্রেমিক।
তাদের মতোই তখনকার লন্ডনভিত্তিক সংবাদপত্র ডেইলি টেলিগ্রাফের রিপোর্টার সাইমন সাইমন ড্রিং, যুক্তরাস্ট্রের চলচ্চিত্র নির্মাতা লেয়ার লেভিনও আরো অনেকে যার যার অবসস্থান থেকে বাঙ্গালীর স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখেন। বাংলাদেশ সরকারও তাদের বিদেশি বন্ধু হিসেবে সম্মাননা দেয়।