নানা কারণে মুখের ভেতরে ঘা হতে পারে। সাধারণত জিহ্বায়, মাড়িতে বা ঠোঁটের ভেতরে ঘা হয়ে থাকে। ইংরেজিতে বলা হয় মাউথ আলসার। যন্ত্রণাদায়ক এই ঘা হলে আক্রান্ত স্থান লালচে বা সাদাটে হয়ে ফুলে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে কিছু কৌশল ও নিয়ম মেনে চলতে হবে।
মুখে ঘা হওয়ার কারণ: কয়েকটি কারণে হতে পারে। যেমন: ভিটামিনের ঘাটতি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট খারাপ, কম পানি পান করা, দুশ্চিন্তাসহ একাধিক কারণ হতে পারে। পাশাপাশি শরীরে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ঘাটতি দেখা দিলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ট্যাবলেট খেলে সমস্যা কমে।
লক্ষণ: মাউথ আলসার বা মুখের ঘা থেকে সবাইকে খুবই সাবধান থাকতে হবে। কেননা অনেক সময় এই মাউথ আলসার ক্যানসারেরও লক্ষণ হতে পারে। তাই দীর্ঘদিন এই সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়। প্রচণ্ড ব্যথা সেই সঙ্গে খাবার খাওয়ার সময় জ্বালাপোড়া করা, অতিরিক্ত লালা নির্গত হওয়া
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ এই উপসর্গগুলো ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।
সমাধান:
হলুদ পানি: ২ চা চামচ হলুদের গুঁড়া পানিতে ফুটিয়ে নিন। এবার ওই পানি ঠান্ডা হলে কুলকুচি করুন। এতে মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর হবে ও ঘায়ের যন্ত্রণাও সারবে।
গ্লিসারিন-ফিকারি: গ্লিসারিনে ফিটকারি মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি মুখের ঘায়ে লাগান। দিনে কয়েকবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
এলাচ: এলাচের গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে মুখের ঘায়ের স্থানে লাগিয়ে রাখুন। আরাম পাবেন।
অ্যালোভেরা: ত্বক কিংবা চুলের যত্নেই অ্যালোভেরা উপকারী নয়। তাজা অ্যালোভেরার রস লাগালে মুখের ঘা দ্রুত সারে।
ঘি: ঘি’র স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। আর খেতেও সেরা। রাতে ঘুমানোর আগে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন ঘি। এতেও মুখের ঘা সারবে দ্রুত।
পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর দাঁতের পরীক্ষা করা, দাঁতের গোড়ায় প্ল্যাক বা ময়লা বা দাঁতের ক্যারিজজনিত রোগ হলে ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা। মুখগহ্বর সর্বদা পরিষ্কার রাখতে সকালে ও রাতে দাঁত ব্রাশ করতে হবে, নরম ও উন্নত মানের দাঁতের ব্রাশ ব্যবহার করা, তিন মাস পরপর ব্রাশ পরিবর্তন করা। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনিসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগের সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এছাড়া খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট (ভিটামিন এ, সি, ই) সমৃদ্ধ খাবার রাখা যেমন শাকসবজি, সবুজ রঙিন ফল (পেঁপে, আম, গাজর, লেবু, পেয়ারা, কাঠবাদাম, রঙিন ক্যাপসিকাম) ইত্যাদি। পাশাপাশি আয়রন এবং ভিটামিন বি-১২, ফলিক অ্যাসিডের অভাব পূরণে কচুশাক, কাঁচা কলা, দুধ, টক দই, চর্বি ছাড়া মাংস গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত নোনতা, ঝালযুক্ত, অ্যাসিডিক বা আ্যলার্জি হতে পারে, এমন খাবার পরিহার করতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে কড়া পানীয় যেমন চা-কফি, অ্যালকোহল পান বর্জন করতে হবে।
মনে রাখতে হবে মুখের ঘা নিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়। মুখের ঘায়ের জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড দন্তচিকিৎসকের (বিডিএস) পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের শরণাপন্ন হতে হবে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, দুই সপ্তাহ বা ১৫ দিনের বেশি যদি স্থায়ী হয়, অবশ্যই বায়োপসি বা মাংসের টিস্যু পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আলসারের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা গেলে নির্দিষ্ট রোগের জন্য সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব এবং কার্যকরী।
ডিবিসি/কেএলডি