বিবিধ

মুরগি আগে না ডিম- গবেষণা কী বলে?

ডেস্ক নিউজ

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ১৬ই জুন ২০২৩ ০৪:০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

মুরগি আগে না ডিম- এই প্রশ্নটা শোনেননি এমন মানুষ বোধকরি একজনও নেই। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মানুষ মরিয়া! তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনাও দীর্ঘ! কিন্তু উত্তর কিছুতেই আর মেলে না! শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থী- সবাই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ঘেমে যান। এবার গবেষণায় সম্ভবত উত্তরটা জানা গেল।

সেই কবে থেকে এই এ বলে ডিম আগে, তো ও বলে মুরগি আগে! যদি কেউ বলে ডিম আগে, তাহলে প্রশ্ন আসে ডিম এল কোথা থেকে? আবার কেউ যদি বলে মুরগি আগে, তাহলেও প্রশ্ন আসে, মুরগির জন্ম হলো কোথা থেকে? আর তাই ডিম না মুরগি, কে আগে পৃথিবীতে এসেছে, তা বের করতে গিয়ে মাথায় হাত সকলের!

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শেফিল্ড এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপক দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। আর দীর্ঘ গবেষণার পর তারা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে ডিমের আগে মুরগি এসেছে। কারণ, কোনও প্রাণীর উদ্ভব ছাড়া কখনওই তার সন্তান বা ডিম উৎপন্ন হতে পারে না।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডিমের খোসায় ওভোক্লিডিন নামে একটি প্রোটিন পাওয়া যায়। এটিই ডিমের খোসা তৈরির প্রধান উপাদান। আর এই প্রোটিন তৈরি হয় শুধুমাত্র মুরগির জরায়ুতে। তাই যতক্ষণ না মুরগির জরায়ু থেকে মেলা এই প্রোটিন ডিম তৈরিতে ব্যবহার না করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ডিম তৈরি হবে না।
 
কাজেই ডিমের আগে মুরগি পৃথিবীতে এসেছে। যখন মুরগি আসে, তখন তার জরায়ুতে ওভোক্লিডিন তৈরি হয় এবং তারপর সেই প্রোটিন দিয়ে ডিমের খোসা এবং ডিম তৈরি হয়।
 
অবশ্য নানা মুনির নানা মত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে কয়েকশো বছর আগে পৃথিবীতে ছিল মুরগীর মতো দেখতে একটি বড় আকারের পাখি। সেই পাখির সঙ্গে মুরগির জিনগত মিল ছিল। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, সেটি ছিল এক ধরনের ‘প্রোটো-চিকেন’। সেই পাখি একটি ডিম পেড়েছিল। এরপর কিছু বিবর্তনগত পরিবর্তন ঘটে সেই ডিমে। আর সেই ডিম থেকেই বিবর্তন ঘটে আজকের মুরগির জন্ম! কাজেই এই বিশেষজ্ঞদের মতে, মুরগি নয়, আগে এসেছে ডিম।

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ জানাচ্ছেন, আধুনিক পাখি ও সরীসৃপের পূর্বসূরীরা সম্ভবত বাচ্চাই প্রসব করতেন, ডিম পাড়তেন না।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ওই অনুসন্ধানের খবর জানিয়েছে এনডিটিভি।

পাখি ও সরীসৃপদের পূর্বসূরীদের বাচ্চা প্রসব সংক্রান্ত বিস্তারিত গবেষণাটি নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশিত হয়েছে। 
 
নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে নিয়ে করা এই গবেষণায় ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা ডিমের অভ্যন্তরে ঝিল্লির ভেতর ভ্রুণ বিকশিত হয়; এমন অ্যামনিওট (পাখি, সরীসৃপ, উভচর) প্রাণীদের টিকে থাকার সফলতার পেছনে কঠোর আবরণযুক্ত ডিমের কৃতিত্ব আছে, এই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেন।

গবেষণায় বলা হয়, ‘অ্যামনিওটিক ডিম এখনকার উভচরদের অ্যামনেওটিক নয়। এমন ডিমের তুলনায় একেবারেই আলাদা। অ্যামনেওটিক নয় ডিমে খোসা ও বহিরাবরণের ঝিল্লির অভাব রয়েছে। অন্যদিকে অ্যামনিওটিক ডিমে অ্যামনিওন, করিয়ন ও অ্যালানটইসসহ ভ্রুণের ঝিল্লির বহর থাকে। থাকে বহিস্থ খোসা, যেটি শক্ত হতে পারে, নরমও হতে পারে।’

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ সায়েন্সের নেতৃত্বাধীন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ৫১টি জীবাশ্ম প্রজাতি ও ২৯টি জীবন্ত প্রজাতিকে নিয়ে কাজ করেছেন, যাদের মধ্যে শক্ত বা নরম খোসার ডিম পাড়া প্রাণী যেমন আছে, তেমনি আছে বাচ্চা প্রসব করে এমন প্রাণীও।

গবেষণায় উভচরসহ অ্যামনিওটের সবগুলো শাখার প্রাণীদের মধ্যেই দেহের ভেতর দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রুণ ধরে রাখার লক্ষণ দেখা গেছে।
 
শক্ত খোসার ডিমকে সবসময়ই বিবর্তনের অন্যতম সেরা উদ্ভাবন হিসেবে দেখা হলেও বিজ্ঞানীদের নতুন এ গবেষণা বলছে বর্ধিত সময় ধরে ভ্রুণ ধরে রাখাই এই প্রজাতির প্রাণীদের চূড়ান্ত সুরক্ষা দিয়েছে।

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল বেনটন বলেছেন, ‘আমাদের কাজ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও অনেকের কাজ পাঠ্যপুস্তকে থাকা ‘সরীসৃপ ডিমের’ ক্ল্যাসিক মডেলকে বর্জ্যের ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মায়ের দেহের ভেতর কম বা বেশি সময়ের জন্য বিকাশমান ভ্রুণকে রক্ষা করতে শক্ত খোসাযুক্ত ডিমের বদলে ভ্রুণকে বর্ধিত সময় ধরে রাখার পদ্ধতির বিকাশ ঘটিয়েছিল প্রথম দিকের অ্যামনিওটরা, যেন পরিবেশ উপযোগী হওয়া পর্যন্ত বাচ্চার জন্ম আটকে রাখা যায়।’

এই গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাওইয়ু জিয়াং বলেছেন, ‘কখনও কখনও কাছাকাছি সম্পর্কযুক্ত প্রজাতির মধ্যে উভয় আচরণই দেখা যায়। যাতে বোঝা যাচ্ছে বাচ্চা প্রসব করা টিকটিকি প্রজাতি ধারণার চেয়েও সহজে ডিম পাড়ায় ফেরত যেতে পারবে।’

ডিবিসি/আরপিকে

আরও পড়ুন