প্লাস্টিক দূষণ এখন আর কেবল মাটি বা সমুদ্রের গভীরেই সীমাবদ্ধ নেই; এবার মেঘেও অস্তিত্ব মিলল ক্ষতিকর ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’-এর। জাপানের একদল বিজ্ঞানী মেঘের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন। গবেষকদের মতে, এই প্লাস্টিক কণা মেঘের গঠন পরিবর্তন করে জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা পরিবেশের জন্য এক নতুন অশনিসংকেত।
সমুদ্রের তলদেশ থেকে এন্টার্কটিকার বরফ বিশ্বের প্রায় সব স্থানেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব আগেই মিলেছিল। তবে মেঘে এর উপস্থিতি শনাক্তের ঘটনা সম্ভবত এটিই প্রথম। জাপানের মাউন্ট ফুজি এবং মাউন্ট ওয়ামার ১,৩০০ থেকে ৩,৭৭৬ মিটার উচ্চতা থেকে সংগৃহীত মেঘের নমুনায় এই ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে।
পিয়ার-রিভিউড জার্নাল এনভায়রনমেন্টাল কেমিস্ট্রি লেটারস-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, মেঘের কুয়াশায় প্রতি লিটারে প্রায় ৬.৭ থেকে ১৩.৯ টুকরো মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। এর মধ্যে পলিইউরেথেনসহ ৯ ধরনের পলিমার এবং এক ধরনের রাবার শনাক্ত করা হয়েছে। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, বাতাসের মাধ্যমে এই দূষণ বহুদূর ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ‘প্লাস্টিক বৃষ্টির’ মাধ্যমে ফসল ও পানি দূষিত করতে পারে।
গবেষণার প্রধান লেখক ও ওয়াসিদা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হিরোশি ওকোচি এক বিবৃতিতে বলেন, “যদি ‘প্লাস্টিক বায়ুদূষণ’ সমস্যাটি গুরুত্বের সঙ্গে এখনই মোকাবিলা না করা হয়, তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত ঝুঁকি বাস্তবে রূপ নেবে এবং ভবিষ্যতে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনবে।”
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, এই প্লাস্টিক কণাগুলো ‘পানি-গ্রাহী’ (water-loving) হওয়ায় তা দ্রুত মেঘ গঠনে সহায়তা করে। এছাড়া উপরের বায়ুমণ্ডলে সূর্যের তীব্র অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে এসে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে, যা সামগ্রিক জলবায়ুকে প্রভাবিত করছে।
সাগরের ঢেউ বা বুদবুদ থেকে সৃষ্ট অ্যারোসল এবং রাস্তায় যানবাহনের টায়ার ঘর্ষণে সৃষ্ট ধুলোকে বাতাসে এই প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ার প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট এই কণাগুলো ইতঃপূর্বে মানুষের ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, রক্ত ও প্লাসেন্টাতেও পাওয়া গেছে। গবেষণায় ক্যান্সারের সঙ্গে এর যোগসূত্র এবং প্রাণীর আচরণগত পরিবর্তনের প্রমাণও মিলেছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
ডিবিসি/পিআরএএন