মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, দেশের সামগ্রিক পুষ্টি চিত্র নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় গড় হিসাবের ওপর নির্ভরতা একটি বিপজ্জনক প্রবণতা। ধনী মানুষের আয় দিয়ে গরিব মানুষকে বিচার করবেন না। কৃষিতে আমরা ভর্তুকির কথা শুনি। কৃষির উপ-খাত হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত কোনো ভর্তুকি পায় না। এ খাতেও ভর্তুকি দরকার।
শুক্রবার (২৮শে নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’-শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বিতীয় দিনের বিষয় ছিল ‘জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ: পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রাণি ও মৎস্য খাত’।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ওপরের দিকের কয়েক শতাংশ মানুষের ভোগক্ষমতার গড় তুলে ধরা হলে বাস্তবে গরিব মানুষের প্রকৃত খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি ঘাটতি আড়াল হয়ে যায়। ফলে নীতিনির্ধারণে ভুল ধারণা তৈরি হয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক পুষ্টিচাহিদা অজানাই থেকে যায়। দেশীয় প্রাণিসম্পদ শুধু উৎপাদনশীলতার জন্য নয়, গ্রামীণ খাদ্যচাহিদা, সংরক্ষণ সুবিধা, নারী কর্মসংস্থান ও কৃষির ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
পুষ্টিহীনতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিরো হাঙ্গার মানে শুধু পেট ভরে খাওয়া নয়, পুষ্টিমান নিশ্চিত করাও জরুরি। আমরা বছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার সংখ্যা ১৩৭টি বলি। কিন্তু এই গড় হিসাব ধনী-গরিবের প্রকৃত খাদ্যাভ্যাসের বৈষম্যকে আড়াল করে দেয়। ফলে দরিদ্র মানুষের প্রকৃত ভোগ্য চিত্র অদৃশ্য থেকে যায়।
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে শিল্প হিসেবে দেখা হলেও উৎপাদনের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এখনও গ্রামীণ সাধারণ মানুষের হাতেই হচ্ছে। শিল্পায়ন প্রয়োজন, তবে দেশীয় প্রজাতির সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে শংকর জাত তৈরির সময় যেন দেশীয় জাতের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে না যায়, সেদিকেও তিনি কঠোর সতর্কবার্তা দেন।
গ্রামীণ খাদ্য ব্যবস্থার বৈচিত্র্য রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, উৎপাদনকারী জেলার মানুষও অনেক সময় নিজ এলাকার দেশীয় মাছ খেতে পারেন না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে দেশীয় মাছের স্বাদ অত্যন্ত ভালো হলেও এখন সেখানকার অনেকেই একুয়াকালচারের পাঙ্গাশ খেতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব বাস্তব তথ্য সাংবাদিকদের তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
একই সঙ্গে একুয়াকালচারের ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করে উপদেষ্টা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ফিড ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে ভবিষ্যতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এসব বিষয়ে এখনই নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের যেসব প্রাণিসম্পদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, সেগুলোর অনেকগুলোই আমাদের দেশে টিকে আছে। দেশীয় জাতের মাছ, মাংস ও প্রাণিসম্পদ বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ, যেগুলো রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।
বিএজেএফ আয়োজিত আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, শিল্প উদ্যোক্তা, করপোরেট ব্যক্তিত্ব, কৃষিবিদ, গবেষক এবং কৃষি, পরিবেশ, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করেন।
ডিবিসি/কেএলডি