জেলার সংবাদ

যমুনার জেগে ওঠা চর আর ফসলি জমির বালু বিক্রির মহোৎসব

সোহেল তালুকদার, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ২৬শে মার্চ ২০২১ ০৮:৫৬:৪২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের যমুনা নদীতে শুকনো মৌসুমে জেগে ওঠা চর ও ফসলি জমি কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন আর বিক্রির মহোৎসব শুরু করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।

অবৈধ এই বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও এদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী খোকার বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করতে পারেনি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে খোকার বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতেও নারাজ তারা।

নাম প্রকাশ না শর্তে একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, অবৈধ বালু ব্যবসায়ী খোকা সরকারি দলের প্রভাবশালী লোক, তার ভাই সরকার দলের চেয়ারম্যান। এ প্রভাবে এক যুগের বেশি সময় ধরে শীত ও বর্ষা সব ঋতুতেই বাংলা ড্রেজার আর মাটিকাটার এক্সক্যাভেটর বসিয়ে দিন-রাত হাজার হাজার ট্রাক বালু বিক্রি করে আসছেন তিনি।

তাদের অভিযোগ, এ বালু উত্তোলন নিয়ে বেশি সমালোচনা শুরু হলে প্রশাসন হঠাৎ হঠাৎ লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু একদিনের জন্যও এই অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করতে পারেননি প্রশাসন। তারা আরো জানান, এটি বাদে আশেপাশের সব বিটবালু ঘাট এখন বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কুকাদাইর-জিগাতলা এলাকার যমুনা নদীর অংশে গেলে তাদের কথার সত্যতা পাওয়া যায়। অন্যসব বিটবালু ঘাট বন্ধ থাকায় এ ঘাটে ট্রাকের সংখ্যাও এখন বেড়ে গেছে কয়েকগুন। অবৈধভাবে জেগে উঠা চর কেটে বালু উত্তোলন ও বিক্রি চলছে দেদারসে। এছাড়াও নিষিদ্ধ বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালুর পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে রীতিমত।

স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করে বলেন, জেগে ওঠা চর কেটে ফেলায় প্রতি বছরই নদী ভাঙনের শিকার হতে হচ্ছে। নিষিদ্ধ বাংলা ড্রেজার বসিয়ে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করায় বর্ষায় নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়ে ওই এলাকায় প্রবল ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এছাড়া বালুবাহী ড্রাম ট্রাকগুলো অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচলের ফলে সড়কগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেপরোয়া ট্রাক চলাচল করায় যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। ধুলোবালিতে চারপাশ অন্ধকার হয়ে থাকে। গাছ ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বাতাসে ওড়া বালু মানুষের চোখ-মুখে গিয়ে ঠান্ডাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এত ক্ষতি হলেও এর প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।

এছাড়াও নিকরাইল ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু সেতুর কোলঘেষে সারপলশিয়া, সিরাজকান্দী-নেংড়া বাজার, মাটিকাটা, চিতুলিয়াপাড়াসহ ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের ৮ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন পয়েটেও চলছে বেপরোয়া বালু বিক্রি।

কাকুদাইর ও জিগাতলা বালুর ঘাট ব্যবসায়ি খোকা বলেন, আমি আমার নিজ জমির বালু কেটে বিক্রি করছি। তাই বালু বিক্রি করতে কারো অনুমতি প্রয়োজন আছে বলে, আমি মনে করি না।

এলাকাবাসীর অভিযোগে ভূঞাপুর-তারাকান্দির সড়ক এলাকায় গড়ে ওঠা বালুর ঘাট বন্ধ করা হলেও অন্য এলাকার বালুর ঘাট কেন বন্ধ হচ্ছে না, এমন প্রশ্নে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, এ উপজেলার যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে চর ও ফসলি জমি কেটে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিনিয়তই এসব অবৈধ বালুর ঘাটে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। এরপরও যদি কোনটা চলমান থাকে তাহলে সেটি বন্ধেরও উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, আজও আমরা চারজন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকে জেল জরিমানা করেছি। সাধারণত যারা প্রভাবশালী তারা ঘটনাস্থলে থাকেন না। আর ঘটনাস্থলে না থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না।

আরও পড়ুন