রক্তশূন্যতা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়। রক্তশূন্যতা অন্য রোগের সঙ্গে একটি উপসর্গ হতে পারে। কখনোবা নিজেই একটি রোগ হতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কোনো কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে গেলে তাকে বলা হয় অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা। দীর্ঘদিন রক্তস্বল্পতায় ভুগলে হয়ে যেতে পারে বড় ধরনের অসুখ।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে তাকে রক্তস্বল্পতা বলে। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঝিমঝিম করা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, কাজকর্মে অনীহা, অনিদ্রা, অল্পতে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, নখে গর্ত, খাবারে অরুচি, বমির ভাব, হজমে ব্যাঘাত ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
শরীরে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকার অভাব হলে অ্যানিমিয়া হয়। ফলে রক্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন বহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। অ্যানিমিয়া অস্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের খাবারের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। খেতে হবে এমন সব খাবার যেগুলো রক্তস্বল্পতা বাড়াতে কাজ করে। কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে। ফলে সেসব খাবার খেলে রক্তস্বল্পতার ভয় কমে।
চিকিৎসকরা বলছেন, একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন ১৩.৮ থেকে ১৭.২ গ্রাম/ডেসিলিটার; নারীর জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিন ১২.১ থেকে ১৫.১ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং শিশুদের রক্তে ১১ থেকে ১৬ গ্রাম/ডেসিলিটার থাকা স্বাভাবিক। কারো রক্তে হিমোগ্লোবিন এর চেয়ে কমে গেলে ধরে নিতে হবে তিনি রক্তাস্বল্পতায় ভুগছেন। রক্তস্বল্পতার সমস্যায় যেসব খাবার খাবেন-
রক্তস্বল্পতা দূর করতে সবচেয়ে কার্যকরী একটি খাবার হলো বেদানা। উপকারী এই ফলে থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার রয়েছে যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই।
বেরি বা জাম জাতীয় ফলেও থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এ ধরনের ফল প্রতিদিন খেলে তা আয়রনের ঘাটতি কমাতে কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
খেজুরের পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না। খেজুরে রয়েছে ভরপুর আয়রন। তাই রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর করতে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় খেজুর রাখতে পারেন।
ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। প্রতিদিন আয়রনযুক্ত ফল যেমন আপেল, টমেটো, বেদানা, কলা, আঙ্গুর, কমলা, গাজর ইত্যাদি খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সরাসরি আয়রন গ্রহণ করতে প্রতিদিন ২-৩ টি ফল খেতে ভুলবেন না।
রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি খাবার কলিজা। এটি আয়রনের ঘাটতি দূর করে। খাসি বা গরুর কলিজায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এটি আদতে রক্তস্বল্পতা দূর করতে ভূমিকা রাখে।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারে কচুর শাক ও সবুজ শাকসবজি। দেহে ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রনের ঘাটতি দূর করে রক্তস্বল্পতা থেকে পরিত্রাণ দেয় সবুজ শাকসবজি। বিশেষ করে কচুশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি ইত্যাদি খুবই কার্যকর।
লেবুতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ থাকে অনেক বেশি যা শরীরে থাকা আয়রনের ঘাটতি পূরণে কাজ করে। তাই রক্তস্বল্পতা থেকে দূরে থাকতে ও শরীর সুস্থ রাখতে খাবারের তালিকায় নিয়মিত লেবু রাখতে পারেন। এই ফল হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কাজ করে।
মাছ অত্যন্ত ভালো আয়রনের উৎস। সামুদ্রিক মাছ ছাড়াও শিং, ইলিশ, ভেটকি, টেংরা ইত্যাদি মাছে রয়েছে প্রচুর আয়রন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ রাখলে তা রক্তস্বল্পতা থেকে দূরে রাখবে।
প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এতে আপনার শরীর সুস্থ রাখা সহজ হয়। আপেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। যে কারণে নিয়মিত আপেল খেলে রক্তস্বল্পতার ভয় থাকে না। সেইসঙ্গে দূরে থাকে আরও অনেক অসুখ।
ডাল রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডাল রাখা যেতে পারে। মসুর, মুগ কিংবা মাস কলাইয়ের ডাল হলে ভালো।