আন্তর্জাতিক, ইউরোপ

রানির সিংহাসনে আরোহনের ৭০ বছরে উৎসবমুখর ব্রিটেন

ফারুক

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ৩রা জুন ২০২২ ০২:০০:২২ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর উদযাপনে উৎসবে মেতেছে ব্রিটেন। উৎসবের রঙে সেজেছে সারা দেশ। চারদিনের জুবিলি উইকেন্ডের আয়োজন শুরু হয়েছে আজ। এতে দেখা মিলেছে রানিসহ রাজপরিবারের সব সদস্যদের।

শুরু হয়েছে রানি এলিজাবেথের প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপন। রাজ শাসনের এ অভূতপূর্ব আয়োজনের অংশ হতে লন্ডনের সড়কে নেমে আসেন লাখো মানুষ।



১৯৫২ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের রাজশাসনের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রাজপরিবারের আর কোন সদস্যের এতো বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। 


 
স্বামী ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যু আর করোনার ধকলে সম্প্রতি খুব কমই জনসম্মুখে এসেছেন রানি। স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে প্লাটিনাম জুবিলির কোন অনুষ্ঠানে তিনি সশরীরে হাজির থাকবেন তা আগে থেকে নিশ্চিত করেনি রাজ কর্তৃপক্ষ। 


তবে বৃহস্পতিবার প্লাটিনাম জুবিলির উইকেন্ড অনুষ্ঠানে বাকিংহাম প্যালেসের ব্যালকনিতে দেখা মিলেছে এলিজাবেথের। পরনে ছিল নীল রঙের রাজকীয় পোশাক। ৯৬ বছর বয়সেও হাস্যোজ্জ্বল রানির দ্যুতি কমেনি একটুও। ব্যালকনিতে তার সঙ্গে ছিলেন ডিউক অব কেন্ট প্রিন্স এডওয়ার্ড।
 

চারদিনের উৎসবে আজ ছিল ট্রুপিং দ্য কালার প্যারেড। এতে অংশ নেয় রাজকীয় নৌ ও বিমান বাহিনী। প্যালেসের ব্যালকনি থেকে এ আয়োজনে প্রত্যক্ষ করেন রানি। হর্স গার্ড প্যারেডে ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চড়ে আয়োজনে অংশ নেন রাজপরিবারের সদস্যরা। মান-অভিমান পেছনে ফেলে উৎসবে যোগ দিতে ব্রিটেন উড়ে এসেছেন প্রিন্স হ্যারি, মেগান মের্কেল ও তাদের সন্তানেরা।


এর আগে ১৯৭৭ সালে সিলভার, ২০০২ সালে গোল্ডেন ও ২০১২ সালে সিংহাসনে আরোহনের ডায়মন্ড জুবিলি পালন করেন রানি এলিজাবেথ। 

 

ব্রিটেনের স্কুলগুলোও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে প্লাটিনাম জুবিলি উৎসব। 



মাথায় মুকুট পরে ব্রিটেনের পতাকা হাতে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন শিশু জানালো রানীর ৭০ বছরের শাসন সম্পর্কে তারা অনেক কিছুই জানেন, শিখেছেনও। 



বাকিংহ্যাম প্যালেস সূত্র জানিয়েছে, ব্রিটেনের ইতিহাসে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথই দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকারী মোনার্ক। যিনি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমন করেছেন ১৫০ বার। 



ভ্রমন করেছেন একশ’র বেশি দেশে। পেট্রন হিসেবে যুক্ত রয়েছেন প্রায় পাঁচ শতাধিকের বেশি সামাজিক ও চ্যারিটি সংগঠনে। 



১৯৫২ সালের পর থেকে রানির ১৮০টি গার্ডেন পার্টিতে অংশ নিয়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। 



শতবর্ষী তিন লাখ নাগরিক ও বিবাহের ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে এমন ৯ লাখ দম্পতিকে ব্যক্তিগতভাবে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠিয়েছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। 



রানীর দীর্ঘ ৭০ বছরের শাসনকালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রধানমন্ত্রীর পদ বদল হয়েছে ১৪ বার।

 

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬ সালে। ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের সিংহাসন লাভ করেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।



এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৩৭ সালে ব্রিটেনের রাজা হন। এলিজাবেথ ছিলেন তখন ব্রিটিশ সিংহাসনের একমাত্র উত্তরাধিকারী। ষোল বছর বয়সে তিনি প্রথম জনসম্মুখে আসেন। আঠার বছর বয়সে সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ জর্জ মৃত্যুর পর এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন।

 

জানেন কি? ব্রিটেনের শাসক কিন্তু দ্বিতীয় এলিজাবেথের হওয়ার কথা ছিল না। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তার অবস্থান ছিল চাচা অষ্টম এডওয়ার্ড এবং বাবা ষষ্ঠ জর্জের পরে। তবে বিপত্নীক নারী ওয়েলিস সিম্পসনকে বিয়ে করার কারণে ১৯৩৬ সালে সিংহাসন ত্যাগ করেন অষ্টম এডওয়ার্ড। অতঃপর তার স্থলাভিষিক্ত হন এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ। সে হিসেবে বলা যায়, ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের শেষ পুরুষ শাসক।



এরপর ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর যুবরাজ ফিলিপের সঙ্গে বিয়ে হয়। তবে দ্য টেলিগ্রাফের মতে, ফিলিপের সঙ্গে এলিজাবেথের প্রথম বাগদান সম্পন্ন হয় ১৯৪৬ সালে। যদিও ১৯৪৭ সালের পহেলা এপ্রিল এলিজাবেথ ২১ বছরে পদার্পণের পর সেটি স্বীকৃতি পায়।



এরপর একইসঙ্গে সংসার আর রাজ্যপাট চালাচ্ছেন তিনি। খাতা কলমে রাজ্যপাট থাকলেও ব্রিটেনের প্রশাসন পরিচালনা করে সে দেশের সরকার। আমজনতার ভোটের মাধ্যমে সেই সরকার বেছে নেয়।



তবে এই নিয়ম বদলে রাজ পরিবারের ঠাটবাট এতটুকুও কমেনি। বরং আজও এই পরিবারের প্রতিটি সদস্য এক-একজন আন্তর্জাতিক সেলেব্রিটি। রানি হিসাবে সম্মান কমেনি দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও। সম্প্রতি জীবনসঙ্গীকে হারান তিনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যুবরাজ ফিলিপ। বার্ধক্যজনিত অসুখের কারণেই পরবর্তীতে মৃত্যু হয় তার।

 

বর্তমানে রানির বয়স ৯৫ বছর। সিংহাসনে বসার পর থেকে বহু পরিবর্তন ও বহু ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছেন তিনি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে আধুনিকায়নের পাশাপাশি দ্রুতগামী পৃথিবীর সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।



সিংহাসনে ৭০ বছর কেটে গেছে তার এখনো জনপ্রিয়তা এবং মানুষের কৌতূহলের বাইরে নন তিনি। প্রতিদিনই লাখ লাখ মানুষ তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ইন্টারনেট ঘাঁটেন। ২০১২ সালে রানি এলিজাবেথ হীরক জয়ন্তী উদযাপন করেন।



ব্রিটিশ রাজ পরিবারের মধ্যে তিনিই সবথেকে জনপ্রিয়। গত ২৩ জানুয়ারি হেলিকপ্টারে পূর্ব ইংল্যান্ডের স্যানড্রিনগাম এস্টেটে পৌঁছে যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। প্রতি বছরই স্যানড্রিনগামে পরিবারের প্রিয় সদস্যদের সঙ্গে ক্রিস্টমাস ও ইংরেজি নববর্ষের উৎসবে সামিল হন রানি। তবে করোনা পরিস্থিতি বাঁধ সাধে সেখানে। তবে বছর শুরুতেই পছন্দের জায়গায় গিয়েছিলেন রানি।



রানির এই নতুন রেকর্ড উপলক্ষে সাজ সাজ রব চলছে পুরো ব্রিটেনজুড়ে। তবে মহামারির কারণে সেই অনুষ্ঠান হবে আগামী জুন। চারদিনব্যাপী হবে সেই অনুষ্ঠান। প্রথা মাফিক ব্রিটিশ সেনাবাহিনীও তাতে অংশগ্রহণ করবে। রাস্তাতেই চলবে আনন্দ, উৎসব। পিকনিকে অংশ নেবেন ব্রিটিশ নাগরিকরা। ৬ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ রবিবার মহামারির কারণেই জনসম্মুখে আসবেন না রানি।

আরও পড়ুন