জুলাই অভ্যুত্থানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক, এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তৎকালীন সরকারের নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ও নির্যাতিতদের স্মরণে ঘোষিত রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারীরা। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে রক্তপাতের প্রতীক ‘লাল’ রঙকে বেছে নেওয়া হয় এবং ফেসবুক প্রোফাইল লাল রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার আহ্বানে সাড়া দেয় শিক্ষার্থীসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গত বছরের ২৯ জুলাই মধ্যরাত পেরিয়ে ৩০ জুলাইয়ের প্রথম প্রহরেই আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রীয় শোকের কর্মসূচিকে উপেক্ষা করে ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি লাল করে দেয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে নিজেদের দ্রোহের কথা জানান। ‘পুবের আকাশ রাঙা হলো সাথী, ঘুমাইয়ো না আর জাগো রে’ কিংবা ‘যারা স্বর্গগত—তারা এখনও জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি’-এর মতো কালজয়ী গানগুলো অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ চোখে লাল কাপড় বেঁধে প্রোফাইল ছবি আপলোড করে কর্মসূচিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা অভিযোগ করেন, সে সময়ে গণমাধ্যম সঠিক তথ্য প্রচার না করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজগুলোই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছিল।
ছাত্রদল নেতারা মনে করেন, এই কর্মসূচি আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণেই এই আন্দোলন একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। এই প্রজন্ম এটিকে দুঃশাসনের অবসানে এক নতুন স্পিরিট হিসেবে দেখছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোফাইল ছবি লাল করে দেওয়া যে আন্দোলনের ঢাল হতে পারে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান তা প্রমাণ করেছে।
ডিবিসি/কেএলডি