অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাষ্ট্র মেরামতের যে ঐতিহাসিক সুযোগ বর্তমানে তৈরি হয়েছে, তা যদি কোনো কারণে ব্যর্থ হয়, তবে আগামী কয়েক দশকেও এমন সুযোগ আর ফিরে আসবে না। তিনি বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক সরকারের প্রভাবকে অস্বাভাবিক নয় বললেও, এর অপব্যবহার রোধে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আজ বুধবার (৩০শে জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর খসড়া নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিচার বিভাগে রাজনৈতিক সরকারের কিছু প্রভাব থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেক সময় দেখা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নিরপেক্ষ কাঠামো যে আইন করে, পরবর্তীকালে রাজনৈতিক সরকার এসে সংকীর্ণ স্বার্থে তা বাতিল করে দেয়। এই ধরনের চর্চা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে তোলে। এই পুনরাবৃত্তি রোধ করতে এবং আইনের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে নতুন আইন চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
উপদেষ্টা আরও বলেন, নিম্ন আদালতে এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় যে, সরকারি উকিল হওয়া সত্ত্বেও অনেকে আর্থিক প্রলোভনে পড়ে প্রতিপক্ষের হয়ে কাজ করেন। এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, প্রস্তাবিত ‘সরকারি অ্যাটনি সার্ভিস অধ্যাদেশ-২০২৫’ কার্যকর হলে এই সমস্যার সমাধান হবে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরে আসবে।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী শাসনামলে দেশের বিচার ব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যারা সেই সময়ে দায়িত্বে ছিলেন, তাদের অনেকেই নিজেদের কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করেননি, যা আইনের শাসনকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। ‘সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশ’ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে এবং বিচার বিভাগ তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।
এই অধ্যাদেশটি বিচার বিভাগে নিয়োগ, পদোন্নতি এবং বদলির ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ ও মেধাভিত্তিক কাঠামো তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সহজ করবে।
ডিবিসি/এএমটি