কোন প্রকার টেন্ডার, কোটেশন ছাড়াই রাস্তার লাখ লাখ টাকার সরকারি গাছ কাটা হচ্ছে প্রকাশ্যে। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব, নির্বিকার।
যেন ‘সরকারি মাল, দরিয়ামে ঢাল’ অবস্থা। গত কয়েকদিনে ৫ লক্ষাধিক টাকার মূল্যবান মেহগনি, কড়ইসহ রাস্তার ধারের সব তাজা গাছ কেটে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। গাছ কেনা-বেচার ধুম পড়েছে, নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন স’মিলে। এই দৃশ্য ঝিনাইদহের শৈলকুপার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের বাগুটিয়া গ্রামের রায়পাড়াতে। বকশিপুর থেকে বাগুটিয়া সড়কটির রাস্তার গাছগুলো ৯ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) থেকে টাকা শুরু হয়েছে, এখনো প্রতিদিন কেটে নেয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বকশিপুর থেকে একটি কাঁচা সড়ক নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের বাগুটিয়ার ভেতর দিয়ে গেছে। এই সড়কের দু’ধার দিয়ে রয়েছে দুই-তিন যুগের বহু মূল্যবান গাছ। এসবের ভেতরে মেহগনি, কড়ইসহ অন্যন্য গাছ রয়েছে। বাগুটিয়া রায়পাড়া অংশের বেশিরভাগ গাছ বিক্রি করেছে হটিফাজিলপুর গ্রামের শফিকুল নামের এক ব্যক্তি। আর তা কিনেছে হাটফাজিলপুরের ইটঁভাটা মালিক মানিক মোল্লা। করাত দিয়ে মেহগনি, কড়ই গাছগুলি কেটে নেয়া হচ্ছে জেলা পরিষদের সদস্য আমজাদ মোল্লার ভাটাতে। গাছ ক্রেতা মানিক মোল্লা জেলা পরিষদ সদস্য আমজাদ মোল্লার ভাই। মিনিট্রাক, নসিমন আর ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে করে গাছগুলি টেনে ভাটায় নেয়া হচ্ছে।
গাছকাটা শ্রমিক নজরুল ইসলাম, আমির হোসেনরা জানান, হাটফাজিলপুরের শফিকুল নামের এক ব্যক্তি গাছ কাটতে বলেছেন। তিনি বিক্রি করেছেন, রাস্তার পাশে তার জায়গা আছে।
গাছভর্তি করেছেন ট্রলি চালকদের একজন বাদশা মিয়া। তিনি জানান, হাটফাজিলপুরের আমজাদ মোল্লার ভাটাতে নিচ্ছেন এসব গাছ।
আর, পথচারী কাজল মন্ডলসহ কয়েকজন জানান, কয়েকদিন ধরে এসব গাছ কাটা চলছে।
জানতে চাইলে গাছক্রেতা ইটভাটা মালিক মানিক মোল্লা জানান, ‘মানুষ বেঁচে বলে আমরা কিনি’ শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে গাছ কিনেছেন বলে জানান।
জেলা পরিষদের সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে গাছ কাটা হচ্ছে এমন অভিযোগে তার ভাই জেলা পরিষদ সদস্য আমজাদ হোসেন মোল্লা জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না, জেনে বলবেন।
এদিকে গাছ বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম জানান, রাস্তা সরকারি হলেও রাস্তার পাশের জায়গা তাদের। আর গাছ তাদের লাগানো। গাছ কাটা নিয়ে মানিক মোল্লার সঙ্গে কথা বলেন।
রাস্তার গাছ কাটা প্রসঙ্গে শৈলকুপা এলজিইডি অফিসের ইঞ্জিনিয়র রওশন হাবিব জানান, প্রথমে রাস্তাটি তাদের মনে করলেও খাতা-কলমে সেটি গ্রামীণ রাস্তা। যার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের। ফলে গাছ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া, না নেয়া তাদের ব্যাপার।
শৈলকুপার ১৩নং নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জানান, রাস্তা কাদের তা তিনি জানেন না, তবে চুরি করে গাছ কাটা হচ্ছে। রাস্তা তাদের হলে তিনি লিখিত অভিযোগ দিবেন।
নিত্যানন্দপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি কর্মকর্তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি, তবে সেখানকার অফিস সহকারী জানান, স্যারের নির্দেশে ভূমি কর্মকর্তা সেখানে গিয়েছিলেন, প্রতিবেদন জমা দিবেন।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, এলজিইডির রাস্তার ক্ষেত্রে রাস্তা থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত সরকারি জায়গা। রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদের হলে সে রাস্তা কতটুকু কাগজে-কলমে আছে তা দেখতে হবে। তহশীলদার কে জানানো হয়েছে, ওই রাস্তার তথ্য জানালে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।