বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ, অপরাধ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতি

ইউসুফ রানা

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ১১ই আগস্ট ২০২৫ ১০:৪৫:৫৬ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুরকে ঘিরে দানা বাঁধছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। বিশেষ করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সীমাহীন দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির কারণে অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এই স্পর্শকাতর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। খোদ নির্মাণকারী রুশ প্রতিষ্ঠান রোসাটম এই অনিয়ম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। ডিবিসি নিউজের অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (NPCBL) ২০১৯ সালে কেমিক্যাল অ্যান্ড রেডিওঅ্যাক্টিভ ওয়েস্ট ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই পদে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অথবা রেডিয়েশন মনিটরিংয়ে ২ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হলেও মুশফিকা আহমেদ নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না।

 

ঢাকার মিরপুরে ডেল্টা হাসপাতালে কর্মরত মুশফিকা অতিরিক্ত সচিব মইনুল ইসলাম তিতাসের শ্যালিকা, যিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পারমাণবিক শক্তি উইংয়ে কর্মরত এবং ওই নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া মুশফিকা পরে ভারপ্রাপ্ত চিফ সুপারিনটেনডেন্ট পদে পদোন্নতি পান, যা নিয়ে রোসাটম তীব্র আপত্তি জানায়। রোসাটম এক চিঠিতে উল্লেখ করে, এই পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর জন্য তাত্ত্বিক জ্ঞান ও সুনির্দিষ্ট দক্ষতা প্রয়োজন, যা অর্জনে অন্তত এক বছর প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তাই তারা মুশফিকার নিয়োগকে বৈধতা দেয়নি। তবে রহস্যজনক কারণে প্রকল্প পরিচালক তাকেই যোগ্য মনে করেন। মুশফিকার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

 

শুধু মুশফিকাই নন, ২০১৯ এবং ২০২৩ সালের নিয়োগেও ব্যাপক দুর্নীতি ও জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারি ব্যবস্থাপক, উপ-ব্যবস্থাপক ও উর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মেকানিক্যাল বিভাগের উর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক পদে রবিউল আলমকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবেদনে ওই পদের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পারমাণবিক স্থাপনায় ৩ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল, যা রবিউলের ছিল না। তিনি আবেদনে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডে ৩ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা উল্লেখ করলেও অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি সেখানে কখনো কাজ করেননি। ওই সময় তিনি ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানের চিফ ইনস্ট্রাক্টর ও একাডেমিক ইনচার্জ আলতাফ হোসেন। জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া রবিউল আলম বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে উপ-ব্যবস্থাপক হয়েছেন।

 

একই সময়ে ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ পান আল মামুন এবং এ কে এম নাজমুল হাসান। শর্ত অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৯ বছর কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু চাকরির আবেদনের সময় তাদের দুজনের কারোই বিএসসি পাশ করার নয় বছর পূর্ণ হয়নি। এই বিষয়ে তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। ২০২৩ সালের ১৩ই মে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বা কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে ন্যূনতম ৭ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কাজ করা আবু কায়সারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া, সিভিল বিভাগের ব্যবস্থাপক ইরতিয়াজ মাহমুদ, উপ-ব্যবস্থাপক মেরাজ আল মামুনসহ ২০১৯ সালে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ পান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অযোগ্য লোক নিয়োগের ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছে।

 

ডিবিসি/এইচএপি

আরও পড়ুন