মুক্তিযুদ্ধে যে কয়টি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে রূপসা নদীতে সংঘটিত যুদ্ধটি। যে যুদ্ধে সামরিক ব্যক্তিত্ব, ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও মহিবুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শহিদ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে রুহুল আমিনকে বীরশ্রেষ্ঠ ও মহিবুল্লাহকে বীর বিক্রম উপাধি দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুইটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে কলকাতার গার্ডেনরিচ নৌ ওয়ার্কশপে দুইটি বাফার গান ও মাইন পড যুক্ত করে গানবোটে রূপান্তরিত করা হয়। গানবোট দুটির নামকরণ করা হয় 'পদ্মা' ও 'পলাশ'। 'পলাশের' ইঞ্জিন রুমে আর্টিফিসার হিসেবে নিয়োগ পান রুহুল আমিন।
মোংলা বন্দরের কাছে অবস্থিত পাকিস্তানি নৌ ঘাঁটি পি.এন.এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে, ৬ই ডিসেম্বর 'পদ্মা', 'পলাশ' ও মিত্র বাহিনীর গানবোট 'পাভেল' ভারতের হলদিয়া নৌ ঘাঁটি থেকে রওনা হয়। ১০ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় কোন বাধা ছাড়াই প্রথমে মোংলা ও দুপুর ১২টায় খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি গানবোট তিনটি পৌঁছালে, তাদের অনেক ওপরে তিনটি জঙ্গি বিমান দেখা যায়। পদ্মা-পলাশ থেকে বিমানের দিকে গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে জানান। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিমানগুলো গুলি ও বোমাবর্ষণ শুরু করে। পলাশের কমান্ডার সবাইকে গানবোট ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু রুহুল আমিন পলাশেই অবস্থান নেন এবং আপ্রাণ চেষ্টা চালান গানবোটকে সচল রাখতে। হঠাৎ একটি গোলা পলাশের ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে এবং তা ধ্বংস হয়ে যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) জালাল উদ্দিন বীর উত্তম বলেন, 'দেখলাম আগুন ধরে গেলো আমার ইঞ্জিনরুমে। পরে দেখি পলাশও বম্বার্ড হয়ে গেছে। তারপরও তা চলছে। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন তার ইঞ্জিনিয়ার ছিলো। সে শিপটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।'
বাধ্য হয়ে রুহুল আমিন ও মহিবুল্লাহ নদীতে লাফিয়ে পড়েন এবং আহত অবস্থায় কোন রকমে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা তাদের নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করে। তার মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে স্থানীয় লোকজন বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীর পাড়ে তাদের দাফন করে এবং সেখান একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়।